আদামনি পাতার উপকারিতা ও গুনাগুন
বন্ধুরা সমস্ত চিকিৎসা বিজ্ঞান মেনে নিয়েছে যে আদামনি পাতা খাওয়ার ফলে শরীরের ছোট-বড় অনেক রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া যায় এর মধ্যে কিছু বিষয় সম্পর্কে আনরা জানি আর কিছু বিষয় সম্পর্কে আমরা জানি না।
আমি আজকের এই আর্টিকেলে লিখব আদামনি পাতা খাওয়ার উপকারিতা ও গুনাগুন সম্পর্কে এবং কিভাবে আদামনি পাতা খেলে কোন রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। আদামনি পাতার আরেকটি নাম হচ্ছে থানকুনি পাতা, কেউ কেউ এই পাতাকে আাদামনি আবার কেউ কেউ থানকুনি পাতা বলে চিনে, তো যে যে নামেই ডাকে না কেন এর উপকারিতা এবং গুণাগুণ কিন্তু একই, তাহলে এবার চলুন এই পাতার উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানা যাক।
আদামনি পাতার উপকারিতা
★ বন্ধুরা প্রতিদিন আদামনি পাতা খেতে পারলে আপনার শরীর থেকে টক্সিন অর্থাৎ বিষাক্ত যত পদার্থ আছে সেগুলো বের হয়ে যাবে, টক্সিন নামক বিষাক্ত পদার্থ শরীরে থাকলে শরীরের বিভিন্ন ক্ষতি হতে পারে এই বিষাক্ত পদার্থ শরীর থেকে বের করা অনেক জরুরী, এর জন্য দুই অথবা তিন দিন সকালে আদামনি বা থানকুনি পাতার রসের সাথে এক চামচ মধু মিশিয়ে খেতে পারলে আপনার শরীর থেকে সমস্ত টক্সিন বের হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ, এতে আপনার শরীরও সুস্থ থাকবে এবং মনে প্রশান্তি বিরাজ করবে।
★ আপনার হাত পা শরীর যদি কোনো জায়গায় কেটে যায় ধারালো কোনো জিনিস দ্বারা যেমন কাচ টিন ইত্যাদি এই ক্ষেত্রে আদামনি পাতা খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে এবং ব্যাথা কমে যাবে ও অল্প দিনেই ক্ষতস্থান শুকিয়ে যাবে। কয়েকটি আদামনি পাতা ছিড়ে দুই হাত দ্বারা ডলে আপনার ক্ষতস্থানে লাগিয়ে কোনো কাপড় বা বেন্ডেজ দ্বারা বেধে ফেলেন। তাছাড়া পুরোনো অনেক ক্ষতস্থান থাকে যেটা সহজে শুকাচ্ছে না, সেই ক্ষেত্রে আপনি আদামনি পাতা সিদ্ধ করে বেটে আপনার ক্ষতস্থানে লাগিয়ে দিলে আশাকরি খুব সহজেই শুকিয়ে যাবে।
থানকুনি পাতার ব্যবহার
★ থানকুনি পাতার ব্যবহার সম্পর্কে মুটামুটি জানতে পারলে আমরা ঘরে বসে খুব সহজেই অনেক রূগ থেকে প্রতিকার পেতে পারি।
যেমন আমাদের অনেকেরই হজম সমস্যা আছে, তাছাড়া বাহিরের কোনো কিছু খেলে প্রায় সময়ই পেটে হজম সমস্যা দেখা দেয়, এছাড়াও পেটে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হয় এমনকি প্রচন্ডভাবে ব্যাথাও হতে পারে সেই ক্ষেত্রেও আদামনি বা থানকুনি পাতার ভূমিকা কোনো অংশে কম নয়? আপনি কিছুদিন এক গ্লাস দুধের সাথে থানকুনি পাতার রস মিশ্রিণ করে খেতে থাকেন দেখবেন খুব অল্পদিনেই আপনার পেটের হজম সমস্যা সহ আরো বিভিন্ন সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
★এছাড়াও অনেকের দেখা যায় পেটে আমাশা এর সমস্যা রয়েছে আমাশা থেকে মুক্তি পাবার জন্য আপনি সকালে ঘুম থেকে উঠে তিন চারটি থানকুনি অর্থাৎ আদামনি পাতা চিবিয়ে খেয়ে ফেলুন তারপর এক গ্লাস পানি পান করুন, অথবা সিদ্ধ করে গরম ভাতের সাথে খেতে পারেন এইভাবে এক সপ্তাহ খেতে পারলে আপনি আমাশা থেকে মুক্তি পেতে পাবেন।
আদামনি পাতার গুনাগুন
★ যাদের ঘন ঘন জ্বর আসে ওষুধ খাওয়ার পরও ভালো কোন ফলাফল পাচ্ছেন না তারা এক চামচ করে আদামনি পাতা ও সিন্ধি পাতার রশ খেলে এই ঘন ঘন জ্বর থেকে রক্ষা পেতে পারেন।
★ অনেকের প্রচুর পরিমাণে কাশি হয়, কাশির যন্ত্রণায় রাত্রে ঘুমাতে পারেন না ঔষধ খেয়েও ভালো কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না তারা যদি আদামনি পাতার রসের সাথে মধু মিশিয়ে খেতে পারেন সেই ক্ষেত্রে দেখবেন আপনার কাশি খুব সহজেই কমে যাবে।
★ থানকুনি / আদামনি পাতা আপনার ত্বক পরিষ্কার ও যৌবন ধরে রাখতে সাহায্য করে কেননা এতে রয়েছে বিভিন্ন প্রকার কেলশিয়াম ও ভিটামিন পদার্থ তাই নিয়মিত আদামনি পাতার রশ খেলে আপনার ত্বক থাকবে পরিষ্কার ও উজ্জ্বল সেই সাথে আপনার যৌবনও ধরে রাখবে
★ এই আদামনি পাতা নিয়মিত খেতে পারলে আপনার শরীরের রক্ত পরিষ্কার করতে সাহায্য করবে ফলে আপনার শরীরের রুগ ব্যাধিও কমে যাবে।
★ ছেলে বা মেয়ে অনেকের দেখা যায় প্রচুর পরিমাণে চুল পরে এমনকি চুল পরতে পরতে মাথা টাক হয়ে যাচ্ছে, এই চুল পরা বন্ধ করতে আপনি সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন এই আদামনি পাতার রস খান দেখবেন আস্তে আস্তে আপনার মাথার চুল পরা কমে যাবে।
এছাড়াও আপনি যদি আরো তারাতারি চুল পরা বন্ধ করতে চান তাহলে আদামনি পাতার রসের সাথে এলো বেরা মিশ্রণ করে মাথার চুলে ব্যবহার করলে অতি দ্রুত আপনার সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে। আদামনি পাতা শারীরিক সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি মানষিক অনেক সমস্যাও সমাধান করে, নিয়মিত এই পাতার রস খেলে আপনার মেধা শক্তিও বৃদ্ধি পাবে এবং মস্তিষ্ক সতেজ থাকবে।
থানকুনি পাতার ক্ষতিকর দিক
বন্ধুরা এতক্ষণ পড়লেন থানকুনি বা আদামনি পাতার উপকারিতা কিন্তু এই থানকুনি পাতার কিছু ক্ষতিকর দিকও রয়েছে যেগুলো না জানলে হয়তোবা আপনার শরীরের ক্ষতি পর্যন্ত হতে পারে, তাহলে চলুন এবার জানা যাক থানকুনি পাতার ক্ষতিকর দিক গুলো।
★ থানকুনি পাতা দীর্ঘদিন খেতে থাকলে আপনার কিডনিতে সমস্যা হতে পারে অর্থাৎ আপনার কিডনি দূর্বল হয়ে যেতে পারে তাছাড়া এই পাতা দীর্ঘদিন খেলে আপনি জন্ডিসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে, আপনার শরীরে বিভিন্ন ধরনের এলার্জি হতে পারে যেমন চুলকানি শরীর ফুলে যাওয়া শাস কষ্ট ইত্যাদি তাই আপনি খুব বেশি পরিমাণে থানকুনি পাতা কাবেন না এবং দীর্ঘদিনও সেবন করবেন না।
এছাড়াও থানকুনি পাতা বেশি পরিমাণে খেলে আপনার শরীরের ওজন বেড়ে যেতে পারে, মহিলারা গর্ভধারণ করা অবস্থায় থানকুনি পাতা খেলে মারাত্মক ধরনের ক্ষতি হতে পারে। আপনার শরীরে যদি কোনো প্রকার অপারেশন করান সেই অপারেশন এর ১৫ দিন আগে থেকে থানকুনি পাতা খাওয়া বন্ধ করে দেন এবং অপারেশন করার পরেও কিছুদিন থানকুনি পাতা খাওয়া বন্ধ রাখুন।
জরুরি কথা
আমি আপনাদের সামনে থানকুনি অর্থাৎ আদামনি পাতার উপকারিতা ও ক্ষতিকর দিকগুলো উপস্থাপন করেছি। এখন আপনি যদি নিয়ম অনুযায়ী আপনার শারীরিক জীবনে ব্যবহার করতে পারেন তাহলে কিন্তু আপনি অনেক প্রকার রুগ-ব্যধী থেকে বেচে থাকতে পারবেন। আর অবশ্যই আপনি এই পাতা কিংবা রশ এক টান ১৪ দিনের বেশি খাবেন না, তা না হলে কিন্তু আপনি ক্ষতির মুখেও পরতে পারেন।