কওমি মাদ্রাসার জামাতের নাম | কওমি মাদ্রাসার নীতিমালা
আপনারা অনেকেই এমন আছেন যারা কিনা কওমি মাদ্রাসার জামাতের নাম ও পাশাপাশি নীতিমালা গুলো জানতে চান, মূলত তাদের জন্যই আজকের লেখাটি। এই লেখাটি পড়লে আপনি কওমি মাদ্রাসার সমস্ত বিভাগের নাম ও নীতিমালা গুলো জানতে পারবেন।
কওমি মাদ্রাসার জামাতের নাম
প্রথম অবস্থায় রয়েছে তিনটি বিভাগ, যেমন নূরানী বিভাগ, নাজেরা বিভাগ ও হিফজ বিভাগ। অনেকে আছে নূরানী ও নাজেরা পড়ে কিতাব বিভাগ চলে আসে। আবার অনেকে নূরানী নাজেরা ও হিফজ শেষ করে কিতাব বিভাগে আসে, তো এখন আমরা জানবো কওমি মাদ্রাসার কিতাব বিভাগের জামাতের নাম সমূহ।
কওমি মাদ্রাসার কিতাব বিভাগের ক্লাসের নাম সমূহ
কিতাব বিভাগের ক্লাসের নাম সমূহ নিম্নে ধারাবাহিক ভাবে লিখা হলো
১/ প্রথমে রয়েছে মক্তব দুই
২/ মক্তব তিন
৩/ মক্তব চার
৪/ বিশেষ জামাত / তাইসির / খুসুসি
৫/ আরবি এক অর্থাৎ মিজান জামাত
৬/ আরবি দুই, জামাতে নাহবেমীর
৭/ আরবি তিন, জামাতে হেদায়াতুন নাহু
৮/ আরবি চার, জামাতে কাফিয়া
৯/ আরবি পাঁচ, জামাতে শরহে জামী
১০/ আরবি ছয়, জামাতে শরহে বেকায়া
১১/ আরবি সাত, জামাতে জালালাইন
১২/ আরবি আট, মিশকাত শরীফ
১৩/ আরবি নয়, বুখারী শরীফ অর্থাৎ দাওরা হাদিস, যাকে মাস্টার্স এর সমমান দেওয়া হয়েছে।
কওমি মাদ্রাসার নীতিমালা
বন্ধুগন কওমি মাদ্রাসার অনেক নিয়ম নীতি বা নীতিমালা রয়েছে। সমস্ত নীতিমালা উল্লেখ করা সম্ভব নয়, কেননা একেক মাদরাসার ভিন্ন ভিন্ন নিয়ম নীতি রয়েছে। কিন্তু একজন ছাত্রকে কওমি মাদ্রাসায় ভর্তি হতে হলে যে সমস্ত নীতিমালা মেনে ভর্তি হতে হয়, বা মানা আবশ্যক, সেগুলো আমি উল্লেখ করতেছি।
★ আমি ওয়াদা করিয়া অত্র জামিয়ায় ভর্তি হইতেছি যে, আমার আখলাখ, চলা ফেরা, ছাট খাট আচার ব্যবহার নবীজির সুন্নত মোতাবেক হইবে। ★ আমি শুধু আল্লাহ ও তার রাসুলের জন এই ধর্মীয় শিক্ষা অর্জন করবো।
★ জামিয়ার সমস্ত আইন কানুন সঠিকভাবে মানিতে বাধ্য থাকিব। জামিয়ার পরিচালক ও উস্তাদগনের প্রতি পূর্ন বিশ্বাস ও যথাযথ ভক্তি রাখিব। কখনো তাহাদের পরিচালনা ও শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে কোন রুপ সমালোচনা করবোনা।
★ একনিষ্ঠতার সাথে রীতিমতো পড়াশোনা করব। পড়াশোনা ব্যতিত অনর্থক সময় নস্ট করবোনা এবং জামিয়ার সমস্ত ছাত্রদের সাথে মিলেমিশে থাকবো। কখনো তাদের সাথে ঝগড়া ফাসাদ করবোনা। ★ উস্তাদগনের সাথে কোনো প্রকার বেয়াদবি করবোনা। বরং তাদের উপদেশাবলি অবনত মস্তিষ্কে মেনে নিবো ও তাদের খেদমত করতে যথেষ্ট চেষ্টা করবো।
★ জামিয়ার বিষয় বস্তু নিয়ে কোন প্রকার দলাদলি করবোনা। যদি করি তাহলে যথাযথ বিচার এমনকি জামিয়া হইতে বাহির করে দিলেও আমার কোনো আপত্তি থাকবেনা। ★ জামিয়ার যে কোনো কাজ সন্তুষ্ট চিত্তে সমাধান করিবো এবং যাবতীয় জিনিসপত্রের হেফাজত করবো।
★ শরীয়ত বিরোধী কোনো কাজ যেমন, টিভি সিনেমা গান বাজনা ফেসবুক ইত্যাদিতে যোগদান করবোনা। ★ জামিয়ায় থাকা অবস্থায় কোনো প্রকার মুবাইল ফোন ব্যবহার করবোনা। ★ জামিয়া থেকে অনুমতি ব্যতিত অপর ভাইয়ের জাগিরে রাত কাটাবো না।
★ জরুরি প্রয়োজন ব্যতিত বাজারে বা কোনো আত্মীয়দের বাড়িতে যাবো না। ★ উজর বশত অত্র জামিয়া থেকে চলে গেলে মুহতামিম সাহেবের কাছ থেকে যথাযথ ভাবে বিদায় নিয়ে যাবো। ★ উস্তাদ, ছাত্র ভাই ও সর্ব সাধারণ সকলকেই আগে আগে সালাম দিবো।
★ বিতর্কিত মাসলা, অর্থাৎ যা জানা নেই, তাহা বলবোনা, প্রয়োজনে উস্তাদগনের কাছ থেকে জেনে বলবো। ★ নিজের ইচ্ছায় জাগির পরিবর্তন করবোনা, দরকার হলে অবিভাবকের অনুমতি নিয়ে করবো। ★ বিশেষ কোনো কারনে মাদরাসায় অনুপস্থিত থাকলে অভিভাবকের স্বাক্ষর সহ দরখাস্ত লিখবো।
★ এই জামিয়ায় যতদিন ছাত্র থাকবো, ততদিন কোনো প্রকার রাজনৈতিক অরাজনৈতিক সংঘটনের সাতে জড়িত হবো না। ★ অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত হবোনা, এবং বাড়তি কোনো পরিক্ষায় অংশগ্রহণ করবোনা। ★ দারুলে ইকামার সমস্ত নীতিমালা মেনে চলবো, পাছ ওয়াক্ত নামাজ জামাতের সাথে পড়বো ও খতমে শরিক থাকবো।
★ জামিয়ার বাহিরে গিয়ে কোনো প্রকার অঘটন ঘটলে জামিয়ার কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবেনা। ★ উপরুক্ত কোনো একটি শর্ত ভঙ্গ বা অপরাধের কারনে জামিয়ার পক্ষ হতে যেকোনো আদেশ মানতে বাধ্য থাকবো। ★ অনেক মাদরাসায় আরো কিছু নিয়ম এড হতে পারে, আবার অনেক নিয়ম কমতেও পারে, এটা মাদরাসার কর্তৃপক্ষ, মুহতামিম সাহেব কর্তৃক লিপিবদ্ধ করা হয়ে থাকে।
কওমি মহিলা মাদরাসায় ভিন্ন নিয়ম কেননা তাদের চলাফেরা আর আমাদের চলাফেরা এক নয়। মহিলা মাদরাসার জামাত তথা ক্লাসও ছেলেদের তুলনায় অনেক কম, তারা ৫/৬ বছর পড়াশোনা করলেই আলেমা হয়ে যায়, আর ছেলেরা আলেম হতে প্রায় ১২/১৩ বছর সময় লেগে যায়।
আশাকরি আমার লেখাটির মাধ্যমে আপনি উপকৃত হয়েছেন, আর লেখার ক্ষেত্রে বা অন্য কোনোভাবে যদি কোনো প্রকার ভুল ভ্রান্তি হয়ে থাকে, তাহলে আশাকরি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।