চিল্লা কি? চিল্লা দেওয়া কি জায়েজ?
আমাদের সমাজে প্রায় একটি বিষয় নিয়ে সবসময়ই ঝগড়া অর্থাৎ তর্ক বিতর্ক হয়ে থাকে, সেটা হচ্ছে মূলত চিল্লা কি? আবার অনেকেই বলে যে চিল্লা দেওয়া কি আদৌও জায়েজ? তো আমি আজকে মূলত এই বিষয় সম্পর্কেই লেখালেখি করব, তো আমি আশা করি আপনার যদি ধৈর্য সহকারে সম্পূর্ণ লেখাটা পড়েন তাহলে আপনিও সঠিক বিষয়টা বুঝতে পারবেন যে মূলত চিল্লা দেওয়া কি জায়েজ? নাকি বেদআত?
চিল্লা কি?
দ্বীন শিখার জন্য ইসলামকে ভালোভাবে বুঝার জন্য, যারা আল্লাহর রাস্তায় বাহির হয় এবং সেখানে 40 দিন সময় অবস্থান করে এটাকেই সাধারণত আমরা চিল্লা বলে থাকি।
চিল্লা দেওয়া কি জায়েজ?
অনেকের মনে আবার প্রশ্ন জাগে যে চিল্লা দেওয়া কি জায়েজ? এটা জানতে হলে প্রতমেই আপনাকে বুজতে হবে যে, চিল্লায় গিয়ে কি করা হয় এবং কেনইবা চিল্লা দেওয়া হয়? চিল্লায় যায় একমাত্র আল্লাহ পাকের পরিচয় লাভ করার জন্য, আল্লাহকে ভালোভাবে বুঝার জন্য জানার জন্য এবং ইসলামের বিষয়াবলী সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান আহরন করার জন্য। এখন আপনি চিন্তা করেন কেউ যদি আল্লাহকে পাওয়ার জন্য, আল্লাহ সম্পর্কে সঠিক ধারণা নেওয়ার জন্য, আল্লাহকে সঠিকভাবে বুঝার জন্য কেউ চিল্লায় যায় এতে কি এমন ক্ষতি হয়ে যায়, তাহলে কেউ যদি এমন ধরনের নিয়ে চিল্লায় যায় তাহলে অবশ্যই চিল্লা দেওয়া জায়েজ।
অনেকে আবার জানতে চাই যে চিল্লা দেওয়া কি সুন্নত? তো এটার উত্তর হচ্ছে না চিল্লা দেওয়া সুন্নত না, বরং প্রত্যেক কাজেরই একটা নিয়ম এক নীতি আছে সেই অনুপাতে চিল্লায় যাওয়া হয়।
৪০ দিনের চিল্লা দেওয়া কি বিদআত?
আমাদের সমাজে কিংবা দেশে এমন কিছু সংখ্যক লোক রয়েছে যারা 40 দিনের চিল্লা দেওয়াকে বিদআত বলে, কিন্তু আদৌ কি ৪০ দিনের চিল্লা দেওয়া বিদআত? এটা বুঝতে হলে আপনাকে আগে একটা উদাহরণ বুঝতে হবে যেমন সাধারণত আমরা কওমি মাদ্রাসায় পড়ালেখা করি অথবা কলেজ ভার্সিটিতে পড়ালেখা করি, কিন্তু এই যে আমরা কওমি মাদ্রাসায় পড়ালেখা করতেছি এর একটা নির্দিষ্ট সময়সীমা আছে যেমন ১২ বছর ১৪ বছর ইত্যাদি। এবং আমরা অনেকেই স্কুল কলেজ ভার্সিটিতে পড়ালেখা করতেছি এবং এখান থেকে ডিগ্রী অর্জন করার জন্য এই পড়ালেখারও একটা সীমারেখা রয়েছে ১০-১২ বছর, ৪০ দিনের চিল্লাটাও ধরে নেন এমন একটা বিষয় অর্থাৎ একটা কোর্সের মত।
এখন যারা বলে যে ৪০ দিনের চিল্লা দেওয়া বিদআত, তাদের মত অনুযায়ী তো মাদ্রাসায় পড়ালেখা করা অভিধান কেননা মাদ্রাসা ও কেউ একটা নিয়ম রয়েছে যে এত বছর পড়ালেখা করলে পড়ালেখা শেষ হবে, কিংবা স্কুল কলেজেও পড়ালেখা করা বিদআত কারণ স্কুল কলেজেরও একটা নির্দিষ্ট সময়সীমা রয়েছে, তো আল্লাহ আমাদের মাফ করুক স্কুল কলেজের পড়া মাদ্রাসায় পড়া কোনটাই বেদাত নয়, তাহলে কেন ৪০ দিনের চিল্লা দেওয়া বিদআত হবে?
তাছাড়া 40 দিনের চিল্লা দেওয়া হয় অনেক সংখ্যক হাদিসের উপর আমল করার জন্য এবং হাদিস থেকে বরকত নেওয়ার জন্য, যেমন একটি হাদিসে বলা হয়েছে যে ব্যক্তি ৪ দিন জামাতের শহীত ফরজ নামাজ আদায় করবে আল্লাহ তাকে পাঁচটি পুরস্কার দিবেন ইত্যাদি, অর্থাৎ সাধারণভাবে একটা কোর্সের মতই 40 দিনের চিল্লাতে দেয়া হয় কাজেই একটা বিদআত হওয়ার কোন প্রশ্নই আসে না।
তবে হা বিদআত হবে ওই সময় যখন কোন ব্যক্তি এই 40 দিন চিল্লা দেওয়াটাকে ইবাদত মনে করবে, অর্থাৎ নামাজ পড়া যেরকম ইবাদত নফল নামাজ পড়া যেরকম ইবাদত আরো বিভিন্ন যে এবাদত গুলো আছে কেউ ব্যক্তি যদি ওই ইবাদতের সাথে ওই 40 দিনের চিল্লা দেওয়া কে তুলনা করে তখন মাত্র ৪০ দিন চিল্লা দেওয়া বিদআত হবে, অন্যতাই চিল্লা দেওয়া বিদআত হবে না, আর যেই সমস্ত লোক ওই ৪০ দিনের চিল্লায় যাওয়াকে মক্কা-মদিনায় গেলে যেই সওয়াব এরকম ধারণা করে, আবার যে বরকতময় জায়গা গুলো রয়েছে যেমন হজ করা ইত্যাদি এগুলোর সাথে এই 40 দিনের চিল্লাকে তুলনা করে তাহলে বিদআত হবে অন্য তাই বিদআত হবে না।
আর যারা নাকি এই সমস্ত ধারণা করে অর্থাৎ 40 দিনের চিল্লায় যাওয়াকে হজের সাথে তুলনা করে ইবাদত মনে করে এমন লোক খুঁজে পাওয়া বড়ই কঠিন, অর্থাৎ এমন লোকের সংখ্যা খুবই কম, সুতরাং ৪০ দিনের চিল্লা আপনি দিতে পারবেন কোন সমস্যা নাই। তাছাড়া এই ৪০ দিনের চিল্লা দেওয়ার মাধ্যমে সাধারণ অনেক মানুষ আছে যারা ইসলাম সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পেরেছে, অর্থাৎ সময়টা বেশি হওয়ার জন্য তারা ইসলাম সম্পর্কে ভালোভাবে বুঝতে পারে।
এমন অনেক মানুষই আছে যারা স্কুল-কলেজে লেখাপড়া করেছে পরবর্তীতে ৪০ দিনের চিল্লা দিয়ে আল্লাহ পাকের হুকুম আহকাম গুলো সঠিকভাবে জেনে বুঝে এখন সে সম্পূর্ণভাবে দ্বীনের উপর আমল করতেছে। সুতরাং আপনারাও 40 দিনের চিল্লা দেন এবং দ্বীন সম্পর্কে ভালোভাবে জানুন এতে করে আপনারাই ফায়দা হবে, এবং এতে বেদায়াতের কোন আশঙ্কা নেই এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা।