তাবলীগ কাকে বলে? দাওয়াত ও তাবলীগের ইতিহাস
তাবলীগ কাকে বলে?
তাবলীগ এটি ভাবে তাফইলের মাজদার, এর শাব্দিক অর্থ হচ্ছে পৌঁছে দেওয়া, পরিভাষায় তাবলীগ বলা হয় আল্লাহ কর্তৃক যে সমস্ত আয়াত ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক যে সমস্ত হাদিস প্রকাশিত হয়েছে তা সমস্ত মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া।
দাওয়াত ও তাবলীগের ইতিহাস
হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদায় হজের ভাষণে তিনি অনেক গুরুত্বপূর্ণ কিছু কথা বলে গিয়েছিলেন, এর মধ্যে তিনি একটি কথা বলেছিলেন যে আমি তোমাদের মধ্যে দুটি জিনিস রেখে গেছি একটি হচ্ছে আল কুরআন এবং আরেকটি হচ্ছে হাদিস অর্থাৎ রাসুল সাঃ এর বাণী। হযরত মুহাম্মদ সাঃ বলেন তোমরা যতদিন এই পবিত্র কুরআন ও আমার বাণীকে আঁকড়ে ধরবে ততদিন পর্যন্ত তোমরা গুমরাহী হবে না, অর্থাৎ গুমরাহী তোমাদেরকে স্পর্শ করতে পারবেনা, আর যখনই তোমরা আল্লাহ পাকের কোরআন ও আমার হাদীস সমূহ কে বাদ দিয়ে দিবে এবং মনগড়া জীবন যাপন করবে তখনি তোমরা গোমরাহী হয়ে যাবে। রাসুল সাঃ ইন্তেকালের পর সাহাবীদের জমানা ছিল সে সময় খুব ভালো ইসলাম কায়েম ছিল, এরপর তাবেয়ি তাবে তাবেয়ি ওদের পর্যন্ত ইসলাম ভালোভাবেই কায়েম ছিল অর্থাৎ অধিকাংশ মানুষই ইসলামের ছায়াতলে ছিল।
সর্বপ্রথম কে দাওয়াত ও তাবলীগ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন?
সর্বপ্রথম দাওয়াত ও তাবলীগ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন উপমহাদেশের বিখ্যাত আলেমে দ্বীন আল্লামা ইলিয়াস রহমাতুল্লাহ। এই সুমহান ব্যক্তি থেকেই সর্বপ্রথম দাওয়াত ও তাবলীগের কাজ শুরু হয় এবং এখন পর্যন্ত এর কাজ চলতেছে এবং কেয়ামত পর্যন্ত চলবে।
দাওয়াত ও তাবলীগ প্রতিষ্ঠার ইতিহাস
সেই সুমহান ব্যক্তি হযরত ইলিয়াস রহমাতুল্লাহ আলাইহি, তিনি ১৮ শতাব্দীতে জন্মগ্রহণ করেন, তিনি খুব অল্প বয়সেই কুরআন শরীফ শিক্ষা সহ প্রাথমিক আরো শিক্ষা অর্জন করেন। তারপর তিনি আরও দশ বছর পড়ালেখা করে আরো উচ্চ লেভেলের আধ্যাত্মিক জ্ঞানও অর্জন করেন, তিনি জ্ঞান আহরণের পর সকলের অনুরোধে নেওয়া নামক স্থানে অংশগ্রহণ করেন, এবং সেখানে তিনি দুইটি মক্তব চালু করেন আর মকত চালু রেখেই তিনি হজ করার জন্য মক্কায় চলে আসেন। হজ করে তিনি যখন আবার মেওয়া নামক স্থানে যান, সেখানে গিয়ে দেখেন সাধারণ মানুষের মধ্যে কোন পরিবর্তন আসলো না অর্থাৎ তারা দিনের পথে ধাবিত হচ্ছে না, এই বিষয়টি দেখে ইলিয়াস রহমাতুল্লাহ আলাই চিন্তা করলেন যে, মানুষ এসে দ্বীন শিক্ষা করবে না বরং মানুষের কাছে গিয়ে গিয়ে দ্বীনের দাওয়াত পৌঁছে দিতে হবে।
মানুষদেরকে আল্লাহর একত্ববাদ ও দ্বীনের দাওয়াত দিয়ে মসজিদ পর্যন্ত আনতে হবে তারপর ইসলামের বুনিয়াদি সমস্ত কিছু তাদেরকে শিক্ষা দিতে হবে এবং তাদেরকে আদর্শ রূপে একজন সত্যিকারের মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। সে সময় মেওয়াতে একটা ইসলামী মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়, সেই মাহফিলে আল্লামা ইলিয়াস সাহেব বয়ান করেন এবং মানুষদেরকে দাওয়াত ও তাবলীগ সম্পর্কে ধারণা দেন ফলে এই মাসের মধ্যেই মেওয়া থেকে অনেকটি জামাত বাহির হয়। বাহির হওয়া জামাতগুলো আশেপাশে অঞ্চলের মধ্যে যাই গিয়ে তাদেরকে ইলিয়াস সাহেবের কথা অনুযায়ী দিনের দাওয়াত দিতে লাগে, আর প্রত্যেক শুক্রবার ততা জুমার নামাজের পর আল্লামা ইলিয়াস সাহেব ঐ সমস্ত সাথীদের থেকে তাদের কালগুজারী শুনতেন। এভাবে আস্তে আস্তে মেওয়া ও তার আশেপাশে স্থানগুলোতে দাওয়াতের কার্যক্রম ছড়িয়ে পড়ে ও মানুষ ও হেদায়েতের ছায়াতলে তরে আসতে থাকে।
অতঃপর হযরত ইলিয়াস রহ: হিজাজ গমন করেন, এবং সেখানে গিয়ে আলেম-ওলামাদের সাথে তার এই কাজটি নিয়ে আলোচনা করলেন। এবং মক্কা-মদিনার বড় বড় আলেমদেরকে তিনি এই দাওয়াত ও তাবলীগ এর ব্যাপারে নসিহত করলেন, এবং তারা সকলেই হযরতের আলোচনা শ্রবণ করলেন। পরবর্তীতে যখন আল্লামা ইলিয়াস রহমাতুল্লাহ হিজাজ থেকে চলে আসবেন, সেই সময় সেখানকার উলামায়ে কেরাম বলেন আপনি মক্কা-মদিনাতেই থেকে যান, এবং মক্কা-মদিনায় দাওয়াত ও তাবলীগের কাজ আঞ্জাম দেন, কিন্তু ইলিয়াস রহমাতুল্লাহ আলাই ভাবলেন যে উপমহাদেশে এই দাওয়াত তার অনেক উপকারী, কেননা উপমহাদেশে অনেক হিন্দু এবং বিধর্মী রয়েছে যাদেরকে তাবলীগের দাওয়াত দিয়ে হেদায়েতের ছায়াতলে নিয়ে আসতে হবে, এই কথা চিন্তা করে তিনি আবারও উপমহাদেশে চলে আসেন।
উপমহাদেশে আসার পর তিনি দেখতে পেলেন তাবলীগের কাজের ফলে অর্থাৎ মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে দাওয়াত পৌঁছে দেওয়ার ফলে অনেক অনেক মানুষই ইসলামের ছায়াতলে চলে আসলো, এমনকি তিনি দেখতে পেলেন যে সমস্ত লোকেরা অন্যায় ব্যভিচার করত তারাও ইসলামের ছায়াতলে চলে আসলেন। তারপর তিনি দিল্লি সহ আরো যে যে স্থানে বেশি মানুষ পথভ্রষ্ট ছিল সেখানে তিনি তাবলীগ জামাতকে প্রেরণ করেন, তারা আল্লাহ পাকের একত্ববাদ এর বাণী ঐ সমস্ত লোকের কাছে পৌঁছে দেন ফলে এভাবেই মানুষ ইসলামে গ্রহণ করতে থাকে। এক সময় দেখা যায় যারা জুয়া খেলতো তারা জুয়া খেলা ছেড়ে দিছে, যারা মদ পান করত তারা মদ পান করাও ছেড়ে দিয়েছে, এবং যারা অশ্লীল বিভিন্ন কাজে লিপ্ত থাকতো তারা ও সেই সমস্ত কাজ থেকে ফিরে এসেছে।
অন্য পোস্ট নবীজির জন্মের অলৌকিক ঘটনা
আর এভাবেই সেই সুমহান ব্যক্তিত্ব হযরত ইলিয়াসকান্দ রুবি এর মাধ্যমে দাওয়াত ও তাবলীগের প্রচার-প্রসার শুরু হয়েছিল, আজও পর্যন্ত সেই দাওয়াত ও তাবলীগ শুধু বাংলার জমিনে নয় বরং পুরো পৃথিবীতেই চলছে। এবং এই দাওয়াত ও তাবলীগের ফলে বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রের বিভিন্ন ধর্মের মানুষকে দিনের সঠিক বুঝ আহরণের মাধ্যমে তারা ইসলামের পথে ধাবিত হচ্ছে। আমরা আল্লাহর কাছে দোয়া করি যার মাধ্যমে তাবলীগের প্রচার প্রসার শুরু হয়েছিল অর্থাৎ আল্লামা ইলিয়াস কান্দিলভি রহমাতুল্লাহি আলাইহি ওনার কবরটাকে আল্লাহ পাক যেন জান্নাতের বাগান বানায় দেন, আমিন।
অন্য পোস্ট শিম পাতার উপকারিতা