ইসলামে বিবাহ কাকে বলে
বিবাহ এর শাব্দিক অর্থ হচ্ছে মিলানো সহবাস করা স্ত্রীসঙ্গম করা ইত্যাদি। ইসলামে বিবাহ বলা হয় ইজাব কবুলের মাধ্যমে নারী কর্তিক পুরুষের যৌনাঙ্গের মালিক হওয়া, অর্থাৎ একে অপরের কাছ থেকে ফায়দা হাসিল করা।
বিবাহ কেন করবেন
গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার জন্য এবং আল্লাহ তায়ালার অধিক নৈকট্য হাসিল করার উদ্দেশ্যে। তাছাড়া হাদিসের মধ্যে বলা হয়েছে, বিবাহ ঈমানের অর্ধেক, সুতরাং কেউ যখন বিবাহ করল সে তার ঈমানকে পরিপূর্ণ করল আর মূলত এই উদ্দেশ্যেই বিবাহ করবেন,
বিবাহের রোকন কয়টি
বিবাহের রোকন হচ্ছে দুইটি ইজাব ও কবুল, ইজাব ও কবুলের মধ্যে দিয়েই বিবাহ সংঘটিত হয়। স্বামী বা স্ত্রী যে কারো প্রথম প্রস্তাবকে ইজাব বলা হয়, আর পরবর্তীতে যে প্রস্তাবটা গ্রহণ করবে এটাকে কবুল বলা হয়।
বিবাহ বৈধতার রহস্য
বিবাহ বৈধতার রহস্য হলো মহান আল্লাহ পাকের ইলেম মোতাবেক সম্পূর্ণভাবে মানুষের জন্য বংশধারা সংরক্ষণ করা। এইজন্য সর্ব প্রথম নবী আদম আঃ থেকে আমাদের নবী মুহাম্মদ সা: পর্যন্ত আল্লাহ তা'আলা যত শরীয়ত বা বিধান দান করেছেন সকল শরীয়ত বা বিদানেই বিবাহের অশেষ গুরুত্ব ছিল। এছাড়াও মানুষের জীবনে বিবাহের অপরিহার্যতা আবশ্যক।
হালাল প্রেম ভালোবাসা মমতা ও উন্নত চরিত্র এর সব কিছুরই সম্পূর্ণ বিকাস ঘটে একমাত্র এই বিবাহের মাধ্যমে। হাদিসের মধ্যে এসেছে বিবাহ করার মাধ্যমে মানুষের চক্ষু ও চরিত্রের সংরক্ষণ হয়, হাদিসের মধ্যে আরও এসেছে এটি পবিত্র ভাবে জীবনযাপন করা ও আদর্শ সমাজ গঠনের জন্য অশেষ ভূমিকা রাখে।
বিবাহের শর্ত কয়টি
বিবাহের শর্ত হচ্ছে চারটি,
১/ ছেলে মেয়ে উভয়েই সরাসরি অথবা কোন উকিলের মাধ্যমে একজন আরেকজনের ইজাবকে শ্রবণ করা।
২/ উভয়ের প্রাপ্তবয়স হওয়া, উভয়েই জ্ঞান সম্পন্ন হওয়া, এবং স্বাধীন দুইজন মুসলমান সাক্ষীর উপস্থিত হওয়া ধর্তব্য।
৩/ নিয়োজিত সাক্ষীর মাধ্যমে ছেলে-মেয়ে উভয়ই ইজাব ও কবুল শ্রবণ করা আবশ্যক।
৪/ মেয়ে বৈধ হওয়া অর্থাৎ মুশরিকি অথবা ব্যভিচারী না হওয়া এবং মেয়ে এমন না হওয়া যাকে বিবাহ করা বৈধ নয়, অর্থাৎ জায়েজ নাই।
বিবাহের উপকারিতা
মানুষের জীবনে বিবাহের গুরুত্ব ও উপকারিতা ধরতে গেলে অপরিসীম। কুরআন ও হাদিসের ভিত্তিতে বিবাহের কিছু উপকারিতা উপস্থাপন করছি।
★বিবাহের মাধ্যমে উভয়ের মানসিক তৃপ্তি লাভ হয়। ★ চক্ষু হেফাজত ও চারিত্রিক পবিত্রতা অর্জন হয়। ★ আদম আঃ এর ধারাবাহিকতা বজায় রাখা ও রাসূল সা: এর সুন্নতের উপর আমল করা হয়। ★ বিবাহের মাধ্যমে অশেষ সুখ ও শান্তির জীবন গড়ে তোলা যায়। ★ বিবাহের মাধ্যমে ঈমান মজবুত ও শক্তিশালী হয়। ★ শারীরিক ও মানসিক উভয় দিক দিয়েই উল্লাসিত বা আনন্দিত হওয়া যায়।
★ বিবাহের মাধ্যমে নারীর সতিত্ব ও অধিকার বাস্তবায়ন হয়। ★ বিবাহ এর মাধ্যমে দুনিয়া ও পরকালের সফলতা অর্জন করা যায়। ★ মহিলা এবং পুরুষ উভয় তাদের যৌন চাহিদা পূরণ করতে পারে। ★ আল্লাহ তায়ালার কুরআনের প্রতি আনুগত্য ও নবীজির আদর্শের পালন করা হয়। ★ বিবাহ করার ফলে আল্লাহ তাআলা অর্থনৈতিক সচ্ছলতা বাড়িয়ে দেয়। ★ ছোট্ট সময় যদি সন্তান মারা যায় তাহলে নবীজির শাফায়াত পাওয়া যায়, এছাড়াও বিবাহের আরো অনেক অনেক উপকার রয়েছে।
বিবাহ করার হুকুম কি
মানুষের অবস্থার চাহিদা অনুপাতে বিবাহের হুকুম ও ভিন্ন ভিন্ন। যদি কোন ব্যক্তির বিবাহ করার শক্তি থাকে অর্থাৎ তার স্ত্রীর চাহিদা পূরণ করতে পারে ও ঐ ব্যক্তি জ্বিনা ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়ার পূর্ণ আশঙ্কা হয়, এবং সে তার স্ত্রীর দেনমোহর, ভরণ পোষণ ইত্যাদি ও বিবাহের খরচ বহন করতেও সক্ষম হয়, তাহলে এমন ব্যক্তির জন্য বিবাহ করা ফরজ। এই ব্যক্তি যদি বিবাহ না করে তাহলে সে গুনার ভাগীদার হবে।
অনুরূপভাবে যদি কোন ব্যক্তির দৈহিক শক্তি না থাকে, অর্থাৎ স্ত্রীর সাথে সঙ্গম করতে সক্ষম না হয়,এবং স্ত্রীর দেনমোহর ও বিবাহের খরচ বহনের টাকা পয়সাও না থাকে তাহলে সমস্ত ওলামায়ে কেরামের মতে ঐ ব্যক্তির উপর বিবাহ করা হারাম।
যদি কোন ব্যক্তি বিয়ে করার পূর্ণ সমর্থ্য রাখে, অর্থাৎ স্ত্রীর হক আদায় করতে সক্ষম হয় কিন্তু আর্থিক দিক দিয়ে স্বাভাবিক থাকে, এবং গুনাহে লিপ্ত হওয়ারও আশঙ্কা নেই তাহলে এমন ব্যক্তির উপর বিবাহ করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা।
ইমাম শাফি (র.) এর অভিমত
ইমাম শাফি রহ. বলেন বিয়ে করা মুস্তাহাব, কেননা বিয়ে করার মাধ্যমে পারিবারিক অনেক ঝামেলায় লিপ্ত হতে হয়। সুতরাং বিয়ে করার থেকে নফল ইবাদত করা আরও বেশি ভালো। ইমাম শাফি রহ. এর দলিল তিনি বলেন কুরআনে কারীম বিবাহকে মুস্তাহাব বলেছে, অতএব বিবাহ হচ্ছে ক্রয়-বিক্রয়ের মত মুস্তাহাব কাজ যেহেতু ক্রয় বিক্রয়ের মধ্যে সময় অতিবাহিত করার চেয়ে নফল এবাদত করা ভালো।
ঠিক তেমনিভাবে বিবাহের মতো মুস্তাহাব কাজে জড়িত না হয়ে নফল ইবাদত করাই উত্তম। ইমাম শাফি রহ. আরো বলেন যে আল্লাহ তায়ালা হযরত ইয়াহিয়া আ: এর প্রশংসা করেছেন তিনি বিবাহ করেন নাই এই জন্য, সুতরাং বিবাহ করার থেকে নফল এবাদত করা আরো বেশি উত্তম কাজ।
হানাফী তথা আমাদের অভিমত
এ ব্যাপারে আমাদের মাজহাব গণের ইমামরা বলেন শুধু শুধু নফল ইবাদতের থেকে বিয়ের মধ্যে লিপ্ত হওয়া উত্তম আর এই ক্ষেত্রে হানাফি মাজহাবের ইমাম গন অনেক প্রমাণ ও পেশ করেন। এর মধ্য হতে সবচেয়ে বড় ও গ্রহণযোগ্য প্রমাণ হলো, আমাদের নবী হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শ্রেষ্ঠ রাসূল, তিনি একজন নয় বরং এগার জনকে বিয়ে করেছেন, এবং যারা বিয়ে করবে না এই ইচ্ছা পোষণ করেছে তাদেরকে কঠিনভাবেই হুঁশিয়ারি প্রদান করেছেন।
সুতরাং বিবাহ করা যদি মুস্তাহাবি হত তাহলে একটি মুস্তাহাব কাজের উপর রাসূল সা: সারাটা জীবন অতিবাহিত করে দিতেন না, বরং উম্মতদেরকেও বিয়ে না করার জন্য আদেশ করতেন। রাসূল বলেন বিবাহ হচ্ছে নবীগণের সুন্নত ইহকাল ও পরকালের শান্তির বস্তু, রাসুল সা: আরো বলেন তোমরা এমন নারীকে বিবাহ করো, যারা অধিক সন্তান প্রসব করতে পারে কেননা আমি কাল হাশরের ময়দানে আমার উম্মত বেশি হওয়ার জন্য গর্ববোধ করব।
পরিশেষে কিছু কথা
সাধারণত আমরা হানাফী মাযহাবের অনুসারী তাই আমাদেরকে বিবাহ করতে হবে, উপরোক্ত যে বিষয়গুলো আমি বর্ণনা করেছি সেই অনুপাতে বিবাহ করতে হবে। আর শাফি মাযহাবের অনুসরণ করা যাবে না। আমাদের মধ্যে অনেকেই আছে যারা কিনা বিবাহ করতে চায় না, তাদের উচিত তারা যেন অতি দ্রুত বিবাহ করে ফেলে।
কেননা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে বিবাহ করার জন্য আদেশ দিয়েছেন, এবং এর বাধা প্রদানকারীকে কঠিন হুঁশিয়ারি দিয়েছেন যে, তিনি তার উম্মতদেরকে নিয়ে গর্বিত হবেন কাল কেয়ামতের ময়দানে। আমি যে লেখাগুলো লেখলাম আল্লাহ পাক আমাদের সবাইকে উপরে লেখা গুলোর উপর আমল করার তৌফিক দান করুক, এবং অতি দ্রুত বিবাহ করার তৌফিক দান করুক, আমীন।