জানাজার নামাজ কি?
জানাযার নামাজ এটা হচ্ছে মূলত একটি দোয়া, এই নামাজের ভিতরে যা কিছু পড়া হয় সবগুলোই দোয়া, ইসলামী শরিয়াহ অনুযায়ী, আমরা সাধারণত মৃত ব্যক্তিকে কবর দেওয়ার পূর্বে জানাজার নামাজ আদায় করে থাকি।
জানাজার নামাজের ফরজ কয়টি?
বন্ধুরা জানাজার নামাজের ফরজ হচ্ছে দুইটি, এক নাম্বার ক্বিয়াম করা অর্থাৎ দাঁড়িয়ে জানাজার নামাজ আদায় করা যদি দাঁড়াতে অক্ষম না হয়। দ্বিতীয়তঃ জানাজার নামাজে চারটি তাকবীর দেওয়া ফরজ, আমরা সকলেই জানি প্রত্যেক নামাজের শুরুতে তাকবীরে তাহরিমা অর্থাৎ প্রথম যে তাকবীর দেয়া হয় এটি ফরজ, কিন্তু জানাযার নামাজে চারটা তাকবীর দেওয়াই ফরজ।
জানাজার নামাজের ওয়াজিব কয়টি?
জানাযার নামাজের ওয়াজিব হচ্ছে ছয়টি, ১/ যে ব্যক্তির জানাজার নামাজ পড়া হবে ওই ব্যক্তিটা অবশ্যই মুসলমান হতে হবে অন্য তাই জানাজার নামাজ পড়া শরীয়ত সম্মত নয়। ২/ মৃত ব্যক্তির শরীরে যে কাপড়টা দেওয়া হয় অর্থাৎ যে কাপড় দিয়ে মৃত ব্যক্তিকে মোড়ানো হয় সেই কাপড়টা পবিত্র হতে হবে। ৩/ মৃত ব্যক্তি অর্থাৎ মাইয়াতকে ইমামের সামনে রাখতে হবে যদি মৃত ব্যক্তিকে ইমামের পিছনে রাখা হয় তাহলে জানাযার নামাজ সঠিক হবে না। ৪/ মৃত ব্যক্তি উপস্থিত থাকা অর্থাৎ তার লাশটা সামনে উপস্থিত থাকা যদি উপস্থিত না থাকে তাহলে নামাজ সঠিক হবে না। ৫/ যে ব্যক্তি নামাজ পরাবে সে ব্যক্তি অবশ্যই মাটিতে স্থির থাকতে হবে অর্থাৎ যদি কোন সরিতে আরোহন অবস্থায় হয় তাহলেও জানাযার নামাজ সঠিক হবে না। ৬/ মৃত ব্যক্তির শরীর ঢেকে রাখ া অর্থাৎ পুরুষের নাভি থেকে হাটুনিস পর্যন্ত এবং মহিলাদের শুধু মুখ মন্ডল বাকি রেখে সমস্ত শরীর ঢেকে রাখা।
জানাযার নামাজের সুন্নত কয়টি?
জানাজার নামাজের সুন্নত হচ্ছে চারটি, ১/ ইমাম সাব অর্থাৎ যিনি জানাজার নামাজ পড়াবেন তিনি মৃত ব্যক্তির সিনা অর্থাৎ বুক বরাবর দাঁড়াবে। ২/ প্রথম তাকবীরের পর ছানা পড়বে, ৩/ দ্বিতীয় তাকবীরের পর আমরা যে দুরুদ ইব্রাহিমটা পড়ি ওই দরুদে ইব্রাহিম পড়বে। ৪/ এবং তৃতীয় তাকবীরের পর মাইয়া্তের জন্য যে দোয়াটা পড়া হয় সেই দোয়াটা পড়বে।
জানাজার নামাজ পড়ার সঠিক নিয়ম
আমরা এতক্ষন জানাজার নামাজ কি জানাজার নামাজের ওয়াজিব কয়টি ফরজ কয়টি সুন্নত কয়টি ইত্যাদি বিষয়ে জানলাম, কিন্তু আমরা অনেকেই জানাজার নামাজ পড়ার নিয়মটা জানিনা জানাযার নামাজের মধ্যে ভুল করে ফেলি, তো এবার আসেন জানা যাক জানাজার নামাজ পড়ার সঠিক নিয়ম।
জানাজার নামাজ পড়ার জন্য সর্বপ্রথমে আমরা নিয়ত করব যে, চার তকবিরের সাথে ইমামের পিছনে মাইয়াতের পুরুষ বা মহিলার জানাজার নামাজ পড়িতেছি, এতটুকু বললেই হবে। ইমাম সাহেব প্রথম তাকবীর দেওয়ার পর আপনিও প্রথম তাকবীর দিবেন তারপর সানা পড়বেন, দ্বিতীয় তাকবীর দেওয়ার পর আপনিও দ্বিতীয় তাকবীর দিবেন এরপর দুরুদ শরীফ পড়বেন, এইভাবে তৃতীয় তাকবীর দেওয়ার পর মাইয়াতের জন্য দোয়াটা পড়বেন।
সাধারণত আমরা একটা ভুল সকলেই করে থাকি সেটা হচ্ছে তাকবীর দেওয়ার সময় আমরা বারবার হাত তুলি, জানাজার নামাজে তাকবীর দেওয়ার সময় হাত তোলা যাবে না হাত তোলা জায়েজ নাই, এই বিষয়টি আমরা অনেকেই জানিনা বিদায় জানাজার নামাজে তাকবীর দেওয়ার সময় হাত তুলি এই ভুলটি কখনোই করা যাবে না। তারপর চতুর্থ তাকবীর দেওয়ার পর প্রথমে ডান দিকে ও পরে বাম দিকে সালাম ফিরিয়ে নিবেন।
জানাযার নামাজের তাকবীর ছুটে গেলে কি করবেন
গ্রামাঞ্চলে আমরা অনেকেই এই সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকি এখন কথা হল আমার যদি জানাজার নামাজে এক তাকবীর অথবা দুই তাকবীর ছুটে যায় তাহলে আমার করণীয় কি, তো সেই ক্ষেত্রে করণীয় হচ্ছে আপনি যদি ইমাম সাহেবকে দ্বিতীয় তাকবীরের মধ্যে পান তাহলে আপনি তাকবীর দিয়ে দ্বিতীয় তাকবীরের পর যে দোয়াটা পড়া হয় সেই দোয়াটা পড়বেন অর্থাৎ দুরুদ শরীফ পড়বেন, এমনিভাবে আপনি যদি তৃতীয় তাকবীরে গিয়ে শরিক হন তাহলে আপনি দোয়া মাগফিরাতটা পড়বেন।
অর্থাৎ আপনি যেই তাকবীরে শরিক হন সেই তাকবীরের পর যে দোয়াটা আছে সেই দোয়াটা পড়বেন, তারপর ইমাম সাহেব সালাম ফিরানোর পর আপনার যে তাকবীর গুলো ছুটে গিয়েছে সেগুলো দিবেন এবং দোয়াগুলো পড়বেন, আর যদি মনে করেন আপনি তাকবীর দিয়ে দোয়া পড়তে পড়তে খাটিয়া তুলে ফেলবে, তাহলে শুধু ছুটে যাওয়া তাকবীর গুলো দিয়ে সালাম ফিরিয়ে নিবেন।
জানাযার নামাজ পড়া কি আবশ্যক?
বর্তমানে আমরা অনেকেই জানাজার নামাজ পড়া কি? এই বিষয়টা সম্পর্কে জানিনা, তো জানাযার নামাজ হচ্ছে ফরজে কেফায়া যা কয়েকজনে মিলে আদায় করলেই আদায় হয়ে যায়, অর্থাৎ জানাজার নামাজ পড়া আবশ্যক এমনকি ওয়াজিব বিষয়টা এমন না।
কিন্তু যদি এমন হয় যে কোন ব্যক্তি মারা গেছে আর তার জানাজার নামাজ কেহই পড়েনি তাহলে মহল্লার সমস্ত লোক গুনাগার হবে, আর যদি কয়েকজন লোক মিলে জানাযার নামাজ আদায় করে ফেলে, তাহলে সমস্ত মহল্লার মানুষ এর হক আদায় হয়ে যাবে। যদিও জানাযার নামাজ পড়া আবশ্যক না কিন্তু জানাযার নামাজ পড়ার অনেক ফজিলত রয়েছে।
জানাজার নামাজের ফজিলত
যদিও জানাযার নামাজ পড়া ফরজে কেফায়া কিন্তু এই জানাজার নামাজ পড়ার বিরাট ফজিলত রয়েছে। আল্লাহ রাসূল সা: বলেন কেউ যদি কোন জানা যায় অংশগ্রহণ করে তাহলে তার আমলনামায় এক কেরাত সব দেওয়া হয়, তারপর সেই ব্যক্তি যদি ওই মৃত ব্যক্তিকে দাফন করার আগ পর্যন্ত থাকে তাহলে তার আমলনামায় আরো এক কেরাত সব দেওয়া হয়, অর্থাৎ কোন ব্যক্তি যদি একজন মানুষের জানাজার নামাজে যায় এবং দাফন সম্পূর্ণ করে আসে তাহলে তার আমলনামায় দুই কেরাত সওয়াব দেওয়া হয়। সাহাবীরা জিজ্ঞেস করলেন, ওগো আল্লাহর নবী এক কেরাত কি??
তখন নবীজি বললেন এক কেরাত হচ্ছে একটা পাহাড় সমান সওয়াব অন্য একটা বর্ণনায় আসছে নবীজি ওহুদ পাহাড় দেখায় দিলেন সুবহানাল্লাহ। এছাড়াও যখন নবী যে কোন জানাজার নামাজে যেতেন তখন সাহাবীদের কে বলতেন তোমরা জানাজার নামাজে শরিক হও কেননা তোমরাও একদিন মৃত্যুবরণ করবে।