মাদরাসা শিক্ষার গুরুত্ব ও ফজিলত
মাদরাসা শিক্ষার ফলে দুনিয়ায় কি ফজিলত, মৃত্যুর সময় কি ফজিলত, কবরে জগতে কি উপকার হবে, হাশরের ময়দানে কি উপকার হবে, এর প্রত্যেকটি বিষয় নিয়ে আজকে আমি আপনাদের সাথে ধারাবাহিক আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ।
দুনিয়ায় মাদরাসা শিক্ষার গুরুত্ব ও ফজিলত
মুহাম্মদ সা: এর পরিভাষায় যারা মাদ্রাসায় পড়ে তাদেরকে তালেবে এলেম বলা হয় অর্থাৎ যারা ইলম অন্বেষণ করে। রাসুল সা: বলেন কোন মাদ্রাসার ছাত্র যখন রাস্তা দিয়ে যায় তখন তার পায়ের নিচে ফেরেশতারা তাদের ডানা বিছিয়ে দেয়, এটা অন্য কারো বেলায় বলা হয় নাই, শুধুমাত্র মাদ্রাসার ছাত্র অর্থাৎ তালেবে এলেমদের জন্যই বলা হয়েছে।
রাসুল সা: বলেন তুমি আলেম হও যদি আলেম হতে না পারো তাহলে আলেমের ছাত্র হও, আর যদি ছাত্র হওয়ার অসম্ভব হয় তোমার জন্য তাহলে তুমি আলেমের কথা অনুযায়ী জীবন যাপন করো, অর্থাৎ আলেম যেভাবে তোমাকে চলতে বলে তুমি সেই ভাবে চলো, আর যদি এটাও তোমার পক্ষে সম্ভব না হয় তাহলে অন্তর থেকে আলেমকে মহব্বত করো।
সুতরাং তুমি যদি উপরের একটিও হতে না পারো তাহলে অন্ততপক্ষে আলেমের বিরোধিতা করিওনা, যদি তুমি আলেমের বিরোধিতা করো আলেমকে ঘৃণা কর তাহলে মৃত্যুর সময় তোমার কালিমা নসিব হবে নাউজুবিল্লাহ।
মুফাসসিরিনে কিরাম তাফসীরের কিতাবের মধ্যে লেখেন হযরত মূসা আলাইহিস সালামকে ছোট বেলায় বিবি আছিয়া বলেছিলেন যে, এই শিশুটিকে আমার ভালো লাগে, মুফাসসিরিনে কেরাম বলেন এই একটি কথার কারণেই বিবি আছিয়ার মরনের সময় ঈমান নসিব হয়েছিল এবং আল্লাহ তাআলা এমন ঈমান নসিব করেছে যে, মৃত্যুর সাথে সাথেই জান্নাতে চলে গেছে।
যখন আছিয়া বলেছিল এই শিশুটিকে আমার ভালো লাগে ঠিক তখনই ফেরাউন বলেছিল এই শিশুটিকে আমার ভালো লাগেনা, মুফাসসিরগণ বলেন এই একটি কারণেই ফেরাউনের ভাগ্যে ঈমান নসিব হয় নাই এবং মৃত্যুর সময় অপদস্ত ও বেইমান হয়ে মারা গেছে।
রাসুল সা: বলেন উলামায়ে কেরাম হল নবীগণের উত্তরসূরী নবীগণের সাথে মহব্বত রাখলে যেমন জান্নাত পাওয়া যায় ঠিক তেমনিভাবে আলেমকে মহব্বত করলেও জান্নাত পাওয়া যায়। নবীগণের সাথে বেয়াদবি করলে যেমন মৃত্যুর সময় কালিমা নসীব হয় না, ঠিক তদ্রূপ আলেমের সাথে বেয়াদবি করলে মৃত্যুর সময় কালিমা নসীব হয় না। আর সেই আলেম তৈরি হয় একমাত্র কওমি মাদ্রাসায়। একজন মানুষ আলেমকে মহব্বত করার ফলে মৃত্যুর সময় ঈমান নিয়ে মরতে পারবে, আর যদি আলেমের সাথে বেয়াদবি করে তাহলে বেইমান হয়ে মরতে হবে।
মাদ্রাসা শিক্ষার দ্বারা কবর জগতের ফজিলত
যুগ শ্রেষ্ঠ মুফাসসির আল্লামা ফখরুদ্দিন রাজি তাফসিরে ইবনে কাসিরের মধ্যে লিখেন মুসা আ: একটা কবরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন দেখলেন এই কবরের মধ্যে আযাব হচ্ছে, তারপর অন্য এক সময় যখন আবার এই কবরের পাশ দিয়ে গেলেন তখন দেখলেন এই কবরের আজাব হচ্ছে না, তখন মুসা এই কবরবাসীকে ডাক দিয়ে বলেন আমি যাওয়ার সময় দেখলাম তোমার কবরের আজাব হচ্ছে, আর এখন আযাব হচ্ছে না, এর কারণটা কি?
তখন এই কবরের ব্যক্তি ডাক দিয়ে বলে, হুজুর আমার মৃত্যুর সময় আমি আমার স্ত্রীর গর্ভে একটা সন্তান রেখে আসছি। আর সেই সন্তানটাকে আজকে মাদ্রাসায় ভর্তি করা হয়েছে, এবং সেই সন্তানকে আজকে প্রথম সবক শিখানো হয়েছে অর্থাৎ বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম যখনই আমার ছেলে এই প্রথম ছবক পরেছে তখনই আল্লাহ আযাবের ফেরেশতাদেরকে বলে হে আজাবের ফেরেশতারা তোমরা তোমাদের আজাবকে বন্ধ কর, কেননা এই ব্যক্তির সন্তান আমাকে রহমান বলে ডাক দিয়েছে, আর তখনই আমার কবর থেকে আজাবের ফেরেশতারা চলে গেছে। এটা হচ্ছে কবর জগতে মাদ্রাসা শিক্ষা বা কুরআন শিক্ষা করার ফজিলত।
মাদরাসা শিক্ষার দ্বারা হাশরের ময়দানের ফজিলত
হাশরের ময়দানে যখন সমস্ত মানুষকে একত্রিত করা হবে, এবং প্রত্যেককে তাদের কর্ম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে, প্রত্যেককেই তার কৃতকর্মের ফলাফল হিসেবে দেওয়া হবে জান্নাত অথবা জাহান্নাম। এই মুহূর্তে আল্লাহপাক বলবেন আলেম যারা আছো তোমরা আলাদা হয়ে যাও কেননা তোমরা দুনিয়াতে আলেম হয়েছো জাহান্নামের আগুনে জ্বলার জন্য নয়।
এখন আপনার প্রশ্ন হতে পারে আলেম হলেই কি জান্নাতে যাওয়া যাবে?? কখনোই না। রাসূল সা; বলেন আলেম দুই প্রকার একজন হচ্ছে হক্কানী আলেম, একজন হচ্ছে দুনিয়াবি আলেম সুতরাং আল্লাহ পাক হক্কানী আলেমদেরকে সেদিন জান্নাত দান করবেন।
মাদ্রাসা শিক্ষার গুরুত্ব
এতক্ষণ মাদ্রাসা শিক্ষার ফজিলত আপনাদের সামনে বর্ণনা করেছি। এতে অবশ্যই আপনারা বুঝতে পারছেন মাদ্রাসার শিক্ষার দ্বারা কি কি উপকার পেতে পারেন। সুতরাং মাদ্রাসা শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম, তাই আপনার সন্তানকে মাদ্রাসা শিক্ষায় শিক্ষিত করুন এবং দুনিয়া ও আখেরাতের সফলতা অর্জন করুন।