আমাদের নবীর উপর পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করা হয়েছে, এই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ এর পিছনে অনেক রহস্য রয়েছে। আমরা অনেকেই আছি যারা নাকি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ কিভাবে আসলো ও পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের ইতিহাস কি? এ সম্পর্কে জানতে চাই, মূলত তাদের জন্যই আজকের এই আর্টিকেলটি লেখা। এই আর্টিকেলে আমি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের ইতিহাস ও কোন নবীর উপর কোন নামাজ এসেছিল সেই বিষয়টি বিস্তারিত লিখব ইনশা-আল্লাহ।
ফজরের নামাজ কিভাবে আসলো?
হযরত আদম এবং হাওয়া আঃ কে আল্লাহ পাক জান্নাতে সৃষ্টি করেছিলেন, তারা জান্নাতের নাজ নেয়ামত গুলো বুক করতে ছিল, আল্লাহ পাক তাদেরকে বলে দিয়েছিল তোমরা জান্নাতের সমস্ত কিছু ভক্ষণ করবে কিন্তু ওই গাছের নিকটেও যেওনা, অর্থাৎ আল্লাহ পাক আদম এবং হাওয়াকে একটি গাছের কাছে যাওয়া থেকে নিষেধ করেছিলেন এবং তাদেরকে এ ব্যাপারে কঠোর হুঁশিয়ারিও দিয়েছিলেন।
আদম এবং হাওয়া জান্নাতে সুখ শান্তিতে বসবাস করতে লাগলো কিন্তু ইবলিশ শয়তানের এটা সহ্য হলো না, তাই ইবলিশ বিভিন্ন কায়দায় আদম এবং হাওয়াকে ওই গাছের ফল এনে ভক্ষণ করায়, ওই গাছের ফল ভক্ষণ করার সাথে সাথে তাদের শরীর থেকে জান্নাতের পোশাকগুলো খুলে পড়ে যায়, এবং এর শাস্তি হিসেবে আল্লাহ পাক আদম এবং হাওয়া একেক জনকে দুনিয়ার এক এক স্থানে নিক্ষেপ করে।
আদম এবং হাওয়া দুনিয়ায় এসে পড়ে এবং তারা এক এক জায়গায় রয়েছে দুজনের সাথে কোন সাক্ষাৎ নেই, আদম আঃ সাড়ে তিনশো বছর পর্যন্ত কাঁদেন এবং আল্লাহর কাছে রোনাজারি করেন, কিন্তু আল্লাহ আদমকে মাফ করেন নাই, অবশেষে আদম চিন্তা করলেন আমি যে জান্নাতের মধ্যে ছিলাম তখন জান্নাতের গেটে একটা নাম দেখছিলাম, হয়তো এই নামটি অনেক সম্মানিত তখন হযরত আদম ওই নাম অর্থাৎ মুহাম্মদ সা: এর নাম নিয়ে যখন দোয়া করলেন তখন আল্লাহ পাক হযরত আদমের দোয়াকে কবুল করলেন এবং বিবি হাওয়া ও আদমকে একত্রিত করে দিলেন।
তখন হযরত আদম শুকরিয়া স্বরুপ দুই রাকাত নামাজ পড়েছিল এবং সেই সময়টা ছিল ফজরের ওয়াক্ত তাই আল্লাহ মোহাম্মদ কে বলেন আপনার উম্মতের উপর দুই রাকাত ফজরের নামাজ ফরজ করে দিলাম।
জোহরের নামাজ কিভাবে আসলো?
হযরত ইব্রাহিম নবী যাকে আল্লাহ পাক খলিলুল্লাহ নামে উপাধি দিয়েছিলেন, হযরত ইব্রাহিম আঃ কে আল্লাহ পাক অনেক পরীক্ষা করেছিলেন, ঠিক তেমনিভাবে আল্লাহ পাক সমস্ত নবীগণকেই পরীক্ষা করেছিলেন। ইব্রাহিম আঃ কে আল্লাহপাক আদেশ করলেন হে ইব্রাহীম তুমি তোমার সবচেয়ে প্রিয় বস্তুটাকে আমার রাস্তায় কোরবানি করো, তখন ইব্রাহিম প্রায় একশোর মতো উট কোরবানি দিল কিন্তু তার কুরবানী কবুল হলো না, এভাবে ইব্রাহিম নবী অনেকবার কোরবানি করার পরও তার কুরবানী কবুল হচ্ছে না।
তারপর একবার চিন্তা করেন আল্লাহপাক তো আমাকে বলেছে আমার সবচেয়ে প্রিয় জিনিস টাকে কুরবানী করার জন্য, সে হিসেবে আমার সবচেয়ে প্রিয় জিনিস হচ্ছে আমার সন্তান ইসমাইল আঃ। অর্থাৎ ইব্রাহিম আলাই সালাম এর কোন সন্তান ছিল না প্রায় 80 বছর বয়সে ইব্রাহিম আঃ কে আল্লাহ পাক একটা সন্তান দান করেছিলেন।
তখন ইব্রাহিম আলাই সাল্লাম বুঝতে পারলেন আমার প্রিয় সন্তানকেই আল্লাহ পাক কুরবানী দেয়ার জন্য বলেছেন, তখন শয়তান ইব্রাহিমকে প্ররোচনা দিলো কিন্তু সেই পরিচয় নাই ইব্রাহিম খান না দিয়ে তার জেলে ইসমাইল কে কোরবানি দেওয়ার জন্য প্রস্তুত হলেন, কিন্তু আল্লাহপাক তো সত্তিকার এই ইসমাইলকে কুরবানী দেওয়ার জন্য বলেন নাই বরং ইব্রাহিমের মনকে পরীক্ষা করার জন্য এরকম আদেশ করেছেন।
আর যখনই হযরত ইব্রাহীম হযরত ইসমাইলের গলায় চুরি দিলেন, তখন আল্লাহ পাক জান্নাত থেকে একটা দুম্বা এনে ইব্রাহিমের চুরির নিচে ধরে দিলেন এবং ইসমাইলকে সরিয়ে নিলেন। ইব্রাহিম আঃ চোখ খুলে দেখে তার ছেলে ইসমাইল দাঁড়িয়ে আছে এবং একটি দুম্বা কুরবানী হয়ে গেছে। তখন সেই সময় শুকরিয়া তান নবী ইব্রাহিম চার রাকাত নামাজ পড়েছিল আর সেই সময়টা ছিল যোহরের সময়।
আল্লাহ পাক বলেন ওগো আমার হাবিব আপনার উম্মত যদি এই যোহরের চার রাকাত নামাজ পড়ে তাহলে ইব্রাহিম আঃ তার ছেলেকে কুরবানী দেওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে যেই সোয়াবের অংশীদার হয়েছিলেন, আমি আল্লাহ আপনার উম্মতদেরকে এই জোহরের চার রাকাত নামাজের বিনিময়ে সেই সওয়াব দান করব।
আসরের নামাজের ইতিহাস
একবার হযরত উজাইর আঃ আল্লাহকে জিজ্ঞেস করলেন ও আল্লাহ তুমি মৃত্যুর পর মানুষদেরকে কিভাবে জীবিত করবে? তখন আল্লাহ বললেন কেন এই ব্যাপারটা কি তোমার কাছে সন্দেহ মনে হয়? তখন উজায়ের আঃ বললেন না অবশ্যই আমি বিশ্বাস করি কিন্তু তুমি যদি দেখায় তা কিভাবে মৃত্যুর পরে মানুষকে জীবিত করে আমার দেখতে ইচ্ছা হচ্ছে।
তখন আল্লাহ পাক হযরত উজাইর আঃ কে মৃত্যুদান করলেন এবং তাকে কবরের মধ্যে ২০০ বছর রাখার পর পুনরায় জীবিত করলেন, তারপর আল্লাহপাক বললেন ওজাইর তুমি বলো কবর দেশে তুমি কতদিন অবস্থান করেছো? তখন হযরত উজায়ের বলেন একদিন অথবা দুই দিন, তখন আল্লাহ বলেন তুমি দেখো তোমার সাথে যে গাধাটা ছিল সেই গাধাটা মরে তার হাড্ডিগুলো চিহ্ন বিছিন্ন হয়ে গেছে।
এবং তুমি তোমার কওম এর কাছে যাও এবং সেখানে গিয়ে দেখো তোমার পরিচিত কোন লোক পাবে না অর্থাৎ তোমার পরিচিত যে সমস্ত লোক ছিল তারা ২০০ বছরের মধ্যে সকলেই মৃত্যুবরণ করেছে। তখন হযরতে উযাইর আঃ দেখলেন সত্যিই তার পরিচিত কোন লোক নেই অর্থাৎ তারা সবাই মৃত্যুবরণ করেছে। তখন তিনি আল্লাহ পাকের এই কুদরত দেখার বিনিময়ে তাৎক্ষণিক চার রাকাত নামাজ আদায় করেন আর নামাজ আদায় করার সময় টা ছিল আসরের সময়, আল্লাহপাক মুহাম্মদ সা: কে বলেন আমি আপনার উম্মতের জন্য এই চার ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করে দিয়েছি।
মাগরিবের নামাজের ইতিহাস
হযরত আইয়ুব আলাইহিস সালামকে আল্লাহ পাক পরীক্ষা করেছিলেন, পরীক্ষা স্বরূপ হযরত আইয়ুব আঃ কে আল্লাহ পাক কুষ্ঠ রোগ দান করেছিলেন। কুষ্ঠ রোগে হযরত আইয়ুব আলাইহিস সালাম প্রায় 20 বছর আক্রান্ত ছিল, সমাজের সকলেই তাকে এক জঙ্গলের মধ্যে ফেলে আসলো, এবং তার স্ত্রীগণ তার কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো এবং তারাও তার কাছ থেকে চলে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করলাম তাদেরকেও চলে যাওয়ার অনুমতি দিলেন, শুধু একজন দিবি হযরত আইয়ুব কুষ্ঠ রোগে থাকাকালীনতার সাথে ছিল সেই বিবির নাম হচ্ছে বিবি রহিমা। নবী আইয়ুব এর শরীর থেকে যখন গোশত পড়ে যাচ্ছিল, গোশত পড়তে পড়তে জিব্বায় গিয়ে সেই রোগ ধরা দিল, অর্থাৎ হযরতে নবী আইয়ুবের জীহ্বায় পোকা ধরে গেল।
তখন হযরত আইয়ুব আল্লাহর কাছে দোয়া করলেন ওগো আল্লাহ তুমি আমার সারা শরীরে কুষ্ঠ রোগ দিয়েছো এতেও আমি খুশি আছি কিন্তু তুমি আমার জিব্বার কেন পোকা দিলে? ওগো আল্লাহ আমার জিব্বায় যদি পোকা ধরে তাহলে আমি কিভাবে তোমার নাম উচ্চারণ করব, আমি কিভাবে তোমার নামের জিকির করব? অন্তত তুমি আমার জিব্বা টাকে সুস্থ রাখো তোমার জিকির করার জন্য।
তখন আল্লাহ পাক হযরত নবী আইয়ুবকে পরিপূর্ণ সুস্থতা দান করলেন এবং তাহাকে সেই ২০ বছর আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দিলেন, তখন নবী আইয়ুব শুক্রিয়া জ্ঞাপনের জন্য তিন রাকাত নামাজ পড়েছিল সেই সময়টা ছিল সূর্য অস্তমিত হওয়ার পরে। তখন আল্লাহপাক আমাদের নবীকে বলেন ওগো আমার হাবিব, আপনার উম্মত যদি এই মাগরিবের তিন রাকাত নামাজ পড়ে তাহলে আমি নবী আইয়ুব ধৈর্য ধারণ করার ফলে যে সওয়াবের অধিকারী হয়েছিল আপনার উম্মতের আমলনামায় সেই সওয়াব দিয়ে দেব।
এশারের নামাজ কিভাবে আসলো?
চার ওয়াক্ত নামাজ তো ৪ নবী পড়ার কারণে আল্লাহ পাক আমাদের উপর ফরজ করে দিয়েছেন, কিন্তু এশারের নামাজটা আল্লাহপাক আমাদের নবী অর্থাৎ মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর নির্দিষ্ট ভাবে নাযিল করেন। বলা হয় কোন ব্যক্তি যদি এশার নামাজ জামাতে পড়ে, তারপর সারারাত ঘুমিয়ে থাকে ঘুম থেকে উঠে যদি ফজরের নামাজ জামাতের সাথে আদায় করতে পারে, তাহলে আল্লাহ পাক ওই ব্যক্তির আমলনামায় সারা রাত্র ইবাদতের সওয়াব দিয়ে দিবেন সুবহানাল্লাহ।