বাদ মাগরিব দাওয়াত ও তাবলীগের বয়ান
বয়ান শুরু করার প্রথমেই আল্লাহ তাআলার শান ও হুজুর পাক সা: ও তার পরিবার-পরিবার্গ সাহাবায়ে কেরামের প্রতি দরুদ পাঠ করেন। অতঃপর হামদ ও সালাতের পর আল্লাহ পাকের দরবারে অসংখ্য অগণিত শুকর, যে আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন আপনাকে আমাকে মাগরিবের তিন রাকাত ফরজ নামাজ জামাতের সাথে আদায় করার তৌফিক দান করেছেন, সেই জন্য আমরা সকলেই সেই রব্বে কাবার দরবারে শুকরিয়া আদায় করি, বলি আলহামদুলিল্লাহ।
একটু চিন্তা করে দেখেন আজকে আমাদের মসজিদের আশেপাশে কত মানুষ ঘোরাফেরা করতেছে, কত মানুষ বাজারের মধ্যে অযথাই সময় নষ্ট করতেছে, আবার কত মানুষ বাজারে সিডির দোকানে বসে আছে, তাদের ভাগ্যে কিন্তু মাগরিবের নামাজ আদায় করার সৌভাগ্যটা হয় নাই, আল্লাহপাক আমাদেরকে মাগরিবের নামাজ আদায় করার মত সৌভাগ্য করেছেন সেই জন্য আবারও শুকরিয়া আদায় করি আলহামদুলিল্লাহ।
বাদ মাগরিব তাবলীগের বয়ান
আল্লাহ পাকের দরবারে একমাত্র মনোনীত ও কবুলিয়াত ধর্ম হচ্ছে ইসলাম, ইসলাম ছাড়া আরও যত ধর্ম বর্ণ আছে যেমন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ইহুদী নাসারা ত্রিপুরা আরও যত ধরনের ধর্ম বলেন সব কটা ধর্ম ধ্বংসের মধ্যে রয়েছে, একমাত্র ইসলাম ধর্মই মনোনীত ধর্ম। সেই ধর্মের উপর আমরা অটল রয়েছি, আল্লাহ পাকের তাওহীদের বাণী একত্ববাদের বাণী সমগ্র পৃথিবীর কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য আল্লাহ পাক যুগে যুগে অসংখ্য অগণিত নবী রাসূল কে দুনিয়ার জমিনে প্রেরণ করেছেন, প্রত্যেকে এসে একটি কথার উপরে দাওয়াত দিছে যে তোমরা বলো যে আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নাই, যারা নবী-রাসূলগণের কথা মানছে অর্থাৎ আল্লাহ পাক একজন আছেন এই কথার সাক্ষী প্রদান করেছে এবং নবীর উপর বিশ্বাস স্থাপন করেছে, তারাই সফল হয়েছে।
দেখেন যারা আল্লাহকে এক হিসেবে মানে নাই নবীকে বিশ্বাস করে নাই তারা কিন্তু ধ্বংসের মধ্যে রয়ে গেছে তারা রেহাই পায়নি আল্লাহ পাকের আজাব থেকে, আল্লাহপাক কাফের নাস্তিকদেরকে আজাব গজব দিয়ে সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্য দৃষ্টান্ত হিসেবে রেখে দিয়েছেন যে দেখো আমি আল্লাহ সবই করতে পারি। এর একটা দৃষ্টান্ত প্রমাণ হচ্ছে হযরত বেলাল, হযরত বেলাল ছিলেন একজন গোলাম এবং তিনি দেখতেও ছিল খুব কালো, কিন্তু হযরত বেলাল ঈমান আনার কারণে আল্লাহ পাকের অনেক অনেক নিকটবর্তী হয়ে গেছে,
কিন্তু দেখেন অপরদিকে বেলালের মুনিব বেলাল যার গোলামি করতো ওমাইয়া ইবনে খলফ সে কিন্তু ঈমান আনে নাই আল্লাহর নবীকে বিশ্বাস করে নাই বেলাল গোলাম হওয়া সত্বেও আল্লাহর কাছে প্রিয় হয়ে গেছে, আর ওমাইয়া ইবনে খলফ টাকা ধন দৌলত থাকা সত্ত্বেও আল্লাহপাকের প্রিয় হতে পারে নাই।
আল্লাহ পাক যত পয়গম্বর এবং রাসূলকে দিনের জন্য প্রেরণ করেছেন তারা প্রত্যেকেই অনেক কষ্ট এবং মুজাহাদা করেছেন, ঠিক তেমনি ভাবে আমাদের নবী জনগো নবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ এই ইসলামের জন্য এত কষ্ট মোজাহাদা করেছেন যে অন্য কোন নবী এত কষ্ট মুজাহাদা করেন নাই। মক্কার কাফেররা যখন আল্লাহর নবীকে কষ্ট দিতে লাগলো মক্কায় দিন প্রচার করতে বাধা দিচ্ছে, তখন দয়ার নবী চিন্তা করলেন আমি তায়েফে যাই আমার নানার দেশে সেখানে গিয়ে আমি তায়েফ বাসীদেরকে ইসলামের দাওয়াত দিব।
এই চিন্তা করে মায়ার নবী তায়েফে গমন করলেন, কিন্তু দুঃখের বিষয় তায়েফ এগিয়েও আমাদের নবী শান্তি পান নাই, নবীজি যখন তায়েব বাসীদের কে দ্বীনের দাওয়াত দেওয়া শুরু করলেন, তখন তায়েফের বড় বড় নেত্রী স্থানীয় লোকেরা, সমাজের দুষ্ট ছেলেদের কেলিয়ে দিয়েছেন যে এই মোহাম্মদ নামক পাগলটাকে তোমরা পাথর মারো।
দাওয়াত ও তাবলীগের বয়ান
তখন তায়েফের দুষ্ট ছেলেরা দয়ার নবীকে পাথর মারতে শুরু করলো এবং নবীজির পিছনে পাগল পাগল বলে চিৎকার করতে লাগলো, ছেলেরা আমার নবীকে এত পরিমাণে পাথর মারতে ছিল যে আমার নবীজির কষ্ট হচ্ছিল, নবীজির সঙ্গী ছিলেন জায়েদ ইবনে হারেস, জায়েদ ইবনে হারেস বলেন আমি আমার শরীর দিয়ে নবীজিকে যথা সম্ভব বাঁচানোর চেষ্টা করেছি, কিন্তু তবুও দোয়ার নবীর শরীরে তারা এত পাথর মারছে যে আমার নবীর শরীর রক্তাক্ত হয়ে গেছে। আমার নবী শরীরের রক্ত মুছতেছে আর বলতেছে আমার শরীরের রক্ত যদি তায়েফের মাটিতে পড়ে তাহলে তায়েফের মাটি তার কোনদিন কোন শস্য হবে না, তারা নবীজিকে আঘাত করতেছে অথচ নবীজি তাদের কথায় চিন্তা করতেছে।
তারা নবীজিকে এত পরিমাণে পাথর মারছে যে আল্লাহর গায়েও সয় নাই, তাৎক্ষণিক আল্লাহ পাক হযরত জিবরাঈলকে পাঠিয়ে দিলেন রাসূলের দরবারে, জিব্রাইল আমিন এসে রাসূলকে বলেন ওগো নবী তায়েফের লোকেরা আপনাকে এত কষ্ট দিতেছে আপনার শরীর থেকে রক্ত বেরিয়ে পড়ছে, আপনি শুধু একবার বলেন আমি এই তায়েববাসীকে দুই পাহাড় দিয়ে চাপ দিয়ে ধ্বংস করে দিব, একদম চিহ্ন বিচ্ছিন্ন করে দিব। কিন্তু দয়ার নবী তখন বলেন না জিব্রাইল ওদেরকে ধ্বংস করার প্রয়োজন নেই, ওরা বুঝতেছে না এজন্য হয়তো আমাকে আঘাত করতেছে, একদিন তারা বুঝবে তাদের কাছে সঠিক বুঝ আসার কারণে তারা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করবে, হয়তোবা এদের মাধ্যমেই একদিন তায়েফের জমিনে ইসলাম প্রতিষ্ঠা হবে। এত কষ্ট মোজাহাদার পরেও আমার নবী দ্বীনের দাওয়াত বন্ধ করেন নাই।
তাশকিলের বয়ান
বয়ানে শেষে যদি তাসকিল করার ইচ্ছা থাকে তাহলে এভাবে বলতে পারেন যে, দেখেন আল্লাহর নবী দ্বীন প্রতিষ্ঠা করার জন্য কত কষ্ট সহ্য করেছেন আর এই জন্যই আজকে আমাদের পর্যন্ত ইসলাম টিকে আছে, আজকে নবীগঞ্জ দুনিয়াতে নেই সেই হিসেবে দিনের দায়িত্ব আমাদের সকলের কাছে। এই তাবলীগের দাওয়াত যতদিন দুনিয়ার জমিনে থাকবে ততদিন পর্যন্ত দুনিয়ার নেজাম আল্লাহ পাক ঠিক রাখবেন আর যখন নাকি তাবলীগের দাওয়াত বন্ধ হয়ে যাবে তখন দিন দুনিয়ার নেজামও ঠিক থাকবে না।
তো ভাই যে দিনের জন্য মানুষের দ্বারে দ্বারে পৌঁছেছেন আল্লাহ রাসুল বারে বারে দাওয়াত দিয়েছেন তাদেরকে দিনে আনার জন্য এত কষ্ট করেছেন আমরা সেই রাসূলের মহব্বতে কি তিন দিনের জামাতের জন্য বাহির হতে পারি না??? আল্লাহকে খুশি করার জন্য অন্তত আল্লাহর রাস্তায় তিনটা দিন আমরা বাহির হই। এভাবে বলার পর যারা যাবে তারা তাদের নাম লেখা হবে।