আওয়াবিনের নামাজ কখন পড়তে হয়

আওয়াবিন নামাজের শাব্দিক অর্থ হলো প্রত্যাবর্তন করা বা ফিরে আসা। পরি ভাষায় আওয়াবিন বলা হয় সাহাবায়ে কেরাম তাবেঈন তাবে তাবেঈন আইম্মায়ে মুজাহিদিন তারা যেভাবে আল্লাহর দিকে ফিরে এসেছে আল্লাহর নৈকট্য হাসিল করেছে তেমনি ভাবে আল্লাহর কাছে ফিরে আসা অর্থাৎ আল্লাহ পাকের নৈকট্য হাসিল করা।


আওয়াবিনের নামাজ কখন পড়তে হয়


আওয়াবিনের নামাজ কখন পড়তে হয় এটা নিয়েও সাধারণত আমাদের দেশে বিভিন্ন ধরনের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ রয়েছে, তো সঠিক মত হচ্ছে মাগরিবের নামাজ ও সুন্নতের পর থেকে এশার নামাজের সময় হওয়ার আগ পর্যন্ত যে সময়টুকু আছে এই সময়টুকুর মধ্যেই আওয়াবিনের নামাজ পড়তে হয়, যদিও অনেকে বলে থাকে যে আওয়াবিনের নামাজ পড়তে হয় সূর্য উঠার পর থেকে যোহরের সময় হওয়ার আগ পর্যন্ত, মূলত তাদের এই কথাটা হচ্ছে ভুল তারা সময় সম্পর্কে খুব ভালোভাবে জ্ঞাত নয়, বরং আওয়াবিনের নামাজের মূল সময় হচ্ছে মাগরিবের নামাজের পর থেকে এশার নামাজের ওয়াক্ত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত, এবং এতটুকু সময়ের ভিতরেই আওয়াবিনের নামাজ আদায় করতে হবে।

আওয়াবীন নামাজের বাংলা নিয়ত


আওয়াবীন নামাজের জন্য বাংলা নিয়ত এভাবে করবেন যে, আমি দুই রাকাত আওয়াবীন নামাজ পড়ার জন্য দাঁড়িয়েছি।

আর আপনি আওয়াবিন নামাজ কিংবা যে কোন নামাজেই বলেন না কেন মুখে স্পষ্টভাবে আওয়াজ করে নিয়ত করা জরুরি না, অর্থাৎ আপনার মনে এটা থাকলেই হবে যে আমি আওয়াবীন নামাজ পড়ার ইচ্ছা করেছি কিংবা আমি এখন আওয়াবীন নামাজ পড়বো এতটুকু বললেই যথেষ্ট, মুখে উচ্চারণ করে শব্দ করে বলা জরুরি না।

আওয়াবিন নামাজের জন্য কি আরবি নিয়ত করতে হবে?


না। আপনি আওয়াবিন নামাজ পড়েন কিংবা অন্য নামাজ পড়েন কোন নামাজের জন্যই আরবিতে নিয়ত করা শর্ত নয়, আমি যেভাবে উপরে বাংলায় বলে দিয়েছি সেভাবে নিয়ত করলেই হয়ে যাবে। কারণ অনেকের মনে এই ধারণা থাকে যে, আমাকে নামাজ পড়ার জন্য অবশ্যই আরবিতে নিয়ত করতে হবে, আসলে তাদের ধারণাটা ভুল নামাজ পড়ার জন্য আরবিতে নিয়ত করতে হবে কিংবা বলতে হবে এরকম কোন হাদিস বর্ণিত হয়নি, সুতরাং আপনি বাংলা ভাষায় নিয়ত করলেই আপনার জন্য যথেষ্ট হবে।


আওয়াবিনের নামাজ পড়ার নিয়ম


রাসুল সাঃ সাহাবাদেরকে মাগরিবের পরে আওয়াবিনের নামাজ পড়ার জন্য বলিয়াছেন, আর এই আওয়াবিন নামাজের নিয়ম সম্পর্কে অনেক হাদিস বর্ণিত রয়েছে। অনেক জায়গায় বলা হয়েছে যে রাসুল সাঃ আওয়াবিন নামাজ ৬ রাকাত করে পড়েছেন আবার অনেক জায়গায় বলা হয়েছে ৮ রাকাত অনেক জায়গায় বলা হয়েছে ১২ রাকাত অনেক জায়গায় বলা হয়েছে ২০ রাকাত অনেক জায়গায় বলা হয়েছে ৪ রাকাত। তবে অধিকাংশ হাদিস দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয় যে রাসুল সাঃ বেশিরভাগ সময়ই আওয়াবিনের নামাজ ৬ রাকাত করে পড়েছেন।

তাছাড়া হযরত আবু হুরাইরা রা: তিনি বলেন যে রাসুল সাঃ বলেছেন যে ব্যক্তি মাগরিবের নামাজের পর ছয় রাকাত নফল নামাজ অর্থাৎ আওয়াবিনএর নামাজ আদায় করবে, এবং এর মধ্যে কোন ধরনের খারাপ কথা উচ্চারণ করে না তাহলে তার আমলকে অর্থাৎ সেই ছয় রাকাত নামাজ কে ১২ বছরের ইবাদত করার সমান সওয়াব দিয়ে দেওয়া হবে! সুবাহানাল্লাহ, আর এই উক্ত হাদিস দেখেও বোঝা যায় যে আওয়াবিন এর নামাজ হচ্ছে ছয় রাকাত।


আওয়াবিনের নামাজ কত রাকাত


যদিও আওয়াবিন নামাজ কত রাকাত এটা সম্পর্কে বিভিন্ন ধরনের হাদিস বর্ণিত রয়েছে, কিন্তু প্রায়ই অধিকাংশ হাদিসের মত হলো ছয় রাকাত করে রাসূল সাঃ পড়েছেন। সে হিসেবে আমরা আওয়াবিন নামাজ ৬ রাকাত পড়তে পারি, আর আমরা যে ছয় রাকাত নামাজ পড়বো সেটা তিন সালামে ৬ রাকাত পড়বো, অর্থাৎ প্রথমে দুই রাকাত পড়ে সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করে দিব, তারপর আবারও দুই রাকাত পরে সালাম ফিরাব, অতঃপর আবারও দুই রাকাত পড়ে সালাম ফিরিয়ে আমরা ছয় রাকাত নামাজ পড়বো।

আওয়াবিন নামাজের সূরা


আওয়াবিন নামাজ পড়ার জন্য কোন নির্দিষ্ট সূরা বা কেরাত নির্ধারিত নেই, অর্থাৎ যার যেই সূরা মন চায় যার যেই কেরাত পছন্দ হয় সেই কারব্যাছড়া দিয়েই আওয়াবিনের নামাজ পড়তে পারবে, সেক্ষেত্রে কোন ধরনের কোন সমস্যা নেই।

তবে একটি বর্ণনায় পাওয়া যায় যে, আবুল বাকা বলেন আওয়াবিনের ছয় রাকাত নামাজ পড়বে, আর প্রত্যেক রাকাতের মধ্যে সুরা ফাতেহা পড়ার পর একবার সূরা কাফিরুন এবং তিনবার সূরা ইখলাস অর্থাৎ কুল হু আল্লাহ সুরা পাঠ করবে, তবে এই বর্ণনাটি কতটুকু সত্য বা সঠিক সেটা আমার জানা নেই, তবে আপনারা যে সূরা বা কেরাত পছন্দ হয় সেই সূরা বা কেরাত দিয়েই আওয়াবিনের নামাজ আদায় করবেন ইনশাআল্লাহ।


আওয়াবিন নামাজ সুন্নত না নফল


আওয়াবিনের নামাজ হচ্ছে নফল নামাজ, অর্থাৎ এই নামাজ কোন সুন্নত কিংবা ওয়াজিব নয় বরং এটা নফল নামাজ, আর নফল নামাজের হুকুম হচ্ছে আপনি যদি নফল নামাজ আদায় করেন সেই ক্ষেত্রে আপনি সওয়াবের অধিকারী হবেন আর যদি আপনি নফল নামাজ আদায় না করেন তাহলে কোন প্রকার কোন ধরনের গুনাহ আপনার হবে না।

তবে ফরজ ওয়াজিব ও সুন্নতের পরে নফল নামাজের মধ্যে যেই সমস্ত নামাজ পড়া হয় এর মধ্যে আওয়াবিন এর নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত অনেক বেশি, কেননা এই নামাজ রাসুল সাঃ পড়েছেন এবং সাহাবাদের কেউ করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। তাছাড়া আপনি যখন ফরজ নামাজ আদায় করবেন আর এই ফরজ নামাজ আদায় করার ফলে আপনি আল্লাহ পাকের জান্নাত পাবেন, আর আপনি যদি বেশি বেশি করেন নফল নামাজ আদায় করেন সেই ক্ষেত্রে নফল নামাজ আদায় করার মাধ্যমে আপনি আল্লাহ পাকের অধিক নৈকট্য হাসিল করতে পারবেন, বলা হয় যে নফল নামাজ আদায় করা ছাড়া আল্লাহ পাকের ওলী হওয়া যায় না।

এতক্ষণ আমরা আওবিন নামাজের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে জানতে ছিলাম, যে এই নামাজ কত রাকাত পড়বো কোন সুরা দিয়া পড়বো কোন সময় পরব ইত্যাদি, কিন্তু এখন আমরা জানবো যে এই আওয়াবিন নামাজ পড়ার ফলে আপনি কি কি ফজিলত পেতে পারেন এবং কতটুকু সোহাবের সৌভাগ্য অর্জন করতে পারেন সেই বিষয়ে সম্পর্কে।


আওয়াবিন নামাজের ফজিলত


★ আওয়াবিন নামাজের অসংখ্য ফজিলত রয়েছে, মোহাম্মদ সা: বলেছেন কেউ যদি মাগরিবের নামাজের পরে ছয় রাকাত আওয়াবিনের নামাজ আদায় করে অর্থাৎ পড়ে তাহলে আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন ওই ব্যক্তির আমলনামায় ১২ বছর ইবাদত করার সমপরিমাণ সওয়াব দিয়ে দিবেন, কোন ব্যক্তি ১২ বছর ইবাদত করে যে সওয়াবটুকু পাবে সেই সওয়াবটুকু পেয়ে যাবে যেই ব্যক্তি মাগরিবের পরে ছয় রাকাত আওয়াবিন এর নামাজ পড়বে।

★ হযরত ইবনে আমার রাযিআল্লাহু তা'আলা আনহু বর্ণনা করেন তিনি বলেন আমি আমার পিতা হযরত আম্মান ইবনে ইয়াসির রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহুকে দেখেছি তিনি মাগরিবের পরে ছয় রাকাত নামাজ পড়তেন এবং তিনি বলতেন, আমি দেখেছি রাসুল সা: কে তিনি মাগরিবের পরে এশার আগে ছয় রাকাত নামাজ আদায় করতেন এবং রাসুল সাঃ বলতেন, যদি কোন ব্যক্তি মাগরিবের পর ছয় রাকাত নফল নামাজ আদায় করে তাহলে আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন তার জীবনের সমস্ত গুনাহগুলোকে ক্ষমা করে দেন যদিও তা সমুদ্রের ফেনা পরিমাণ হয়! সুবহানাল্লাহ।

★ আম্মাজান হযরত আয়েশা সিদ্দিকা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহা থেকে বর্ণিত তিনি বলেন যে নবী করীম সা: বলেছেন, যদি কোন বান্দা বা বান্দি মাগরিবের পরে বিশ রাকাত নামাজ আদায় করে তাহলে আল্লাহ পাক ওই বান্দা বা বান্দির জন্য জান্নাতের মধ্যে একটি ঘর তৈরি করেন, সুবহানাল্লাহ। হযরত হাসান বসরী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলতেন মাগরিব ও ইশা এর মধ্যবর্তী সময়ের মধ্যে যে নফল নামাজ পড়া হয় এটা ও তাহাজ্জুতের নামাজের অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকে।

উপসংহার: আওয়াবিন নামাজ এবং অন্যান্য যত নফল নামাজ রয়েছে ঐ সমস্ত নফল নামাজে দীর্ঘ কেরাত ও দীর্ঘ রুকু সেজদা করা উত্তম, অর্থাৎ লম্বা সূরা দিয়ে ওই সমস্ত নফল নামাজগুলো আদায় করা এবং রুকু এবং সেজদাতে অধিক সময় বিলম্ব করা উত্তম। সুতরাং আমরা আওয়াবিন নামাজ পড়ার নিয়ম তার গুরুত্ব ফজিলত সম্পর্কে জানতে পারলাম। এখন আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন যেন আমাদের প্রত্যেককেই এই গুরুত্বপূর্ণ নফল নামাজ অর্থাৎ আওয়াবিনের নামাজ টুকু আদায় করার তৌফিক দান করেন।

Previous Post Next Post

نموذج الاتصال