পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা হচ্ছে ঈমানের অঙ্গ, আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন তার পবিত্র কোরআনের মধ্যে বলেন নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা তাওবা কারীদেরকে ভালবাসেন সেই সাথে যারা পবিত্রতা অর্জন করে তাদের কেউ আল্লাহ তা'আলা ভালোবাসেন। আমরা যখন নাপাক হয়ে যাই অর্থাৎ ও পরিষ্কার থাকি তখন আমাদের পরিষ্কার হওয়া উচিত, আর সেই পুরস্কার অর্থাৎ পবিত্রতা অর্জন করা যায় তিন ভাবে তায়াম্মুমের মাধ্যমে ওযুর মাধ্যমে ও গোসলের মাধ্যমে। তো আজকের আর্টিকেলে গোসলের ফরজ থেকে নিয়ে আরো বিস্তারিত আলোচনা করা হবে আশা করি আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়লে অনেক কিছুই শিখতে পারবেন।
অন্য পোস্ট মাদ্রাসা শিক্ষার গুরুত্ব
ওযুর সুন্নত ও ফরজ কয়টি ও কি কি
গোসল কত প্রকার ও কি কি
গোসল হচ্ছে মোট চার প্রকার
- ফরজ গোসল
- ওয়াজিব গোসল
- সুন্নত গোসল
- মুস্তাহাব গোসল
গোসল ফরজ হওয়ার কারণ
যখন পুরুষের উত্তেজনবশত কিংবা উত্তেজনা ছাড়া স্বপ্নে কিংবা প্রকাশ্যে যেভাবেই হোক না কেন যদি বীর্যপাত হয়, যখন স্বামী স্ত্রী সহবাস করে (তখন তাদের বীর্যপাত হোক বা না হোক) তখন তাদের উপর গোসল করা ফরজ। আর মহিলাদের যখন হায়েজ নেফাজ অর্থাৎ পিরিয়ড শেষ হয় তখন তাদের উপর গোসল করা ফরজ। উল্লেখ্য একটি বিষয় জেনে রাখা দরকার আর এই বিষয়ে অনেকে প্রশ্নও করে থাকে, তো প্রশ্নটি হচ্ছে অনেকেই বলে মাস্টারবিশন অর্থাৎ হস্তমৈথুন করলে কি গোসল ফরজ হবে? তো তাদের প্রশ্নের উত্তর হচ্ছে যদি কোন পুরুষ কিংবা মহিলা মাস্টারবেশন কিংবা হস্তমৈথন অথবা অন্য যেকোনো উপায়ে তাদের বীর্যপাত ঘটায় তবুও তাদের উপর গোসল ফরজ হবে।
গোসলের ফরজ কয়টি ও কি কি
গোসলের ফরজ হচ্ছে তিনটি ১. কুলি করা ২. নাকে পানি দেওয়া ৩. সমস্ত শরীর ভালোভাবে ধৌত করা
ফরজ গোসলের নিয়ম
যে ব্যক্তির উপর গোসল ফরজ হয়েছে ওই ব্যক্তি প্রথমেই তার দুই হাতকে কবজি পর্যন্ত ভালোভাবে ধৌত করে নেবে। অতঃপর তার শরীরে বাকা পড়ে যেই যেই স্থানে নাপাকি লেগেছে সেখান থেকে খুব ভালোভাবে নাপাকি পরিষ্কার করবে, এরপরে এক হাত দিয়ে অপর হাতকে খুব ভালোভাবে ধৌত করে নেবে। তারপর প্রথমেই গোসলের নিয়ত করবে তবে নিয়তটা মনে মনে করলেই যথেষ্ট হবে প্রকাশ্যে বলার দরকার নেই বা বলা ও যাবে না। এরপর সেই ব্যক্তি ওযু করে নেবে তবে ওযু করার সময় দুই পা ধৌত করার প্রয়োজন নেই কেননা গোসলের শেষে দুই পা ধৌত করে নিলেই যথেষ্ট হবে।
অতঃপর গোসলের তারতিব অনুযায়ী সর্বপ্রথম ওই ব্যক্তি তার মাথায় পানি ঢালবে, অতঃপর ডান কাঁধে পানি ঢালবে, তারপর বাম কাঁধে পানি ঢালবে, এরপর সমস্ত শরীরে পানি ঢেলে নিবে। তবে ফরজ গোসল করার সময় একটা কথা অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে যে গোসল করার সময় যেন শরীরে কোন জায়গা শুকনা না থাকে, অর্থাৎ সম্পূর্ণ শরীরের প্রত্যেক স্থানে যেন ভালোভাবে পানি যায় সেই বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে।
ফরজ গোসল না করার শাস্তি
যখন কোন ব্যক্তির উপর গোসল করা ফরজ হয় তখন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ওই ব্যক্তি গোসল করে নেওয়াই উত্তম, কেননা সেই ব্যক্তি নাপাকি অবস্থায় রয়েছে। তাছাড়া যে ব্যক্তির উপর গোসল করা ফরজ হয় সেই ব্যক্তি নামাজ কালাম কিছুই করতে পারবে না এমনকি পবিত্র কুরআনুল কারীমও তেলাওয়াত করতে পারবে না, সে ক্ষেত্রে পবিত্রতা অর্জনের জন্য জুনুবী ব্যক্তির উচিত যত তাড়াতাড়ি সম্ভব গোসল করে নেওয়া।
ফরজ গোসল না করার শাস্তি: যদি কোন ব্যক্তির উপর গোসল ফরজ হয় আর ওই ব্যক্তি গোসল না করে যদি সময় অতিবাহিত করে সে ক্ষেত্রে যদি নামাজ অতিবাহিত করে তাহলে তার উপর নামাজের শাস্তি আর হবে, সে যদি রোজা না রাখে তাহলে তার উপর রোজা না রাখার শাস্তিই আরোপিত হবে।
কখন গোসল করা ওয়াজিব
দুইটি কারণে গোসল করা ওয়াজিব প্রথম কারণ হচ্ছে কোন মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেওয়ার পর। দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে যখন পুরো শরীরের মধ্যে নাপাক মিশ্রিত হয়ে যায় এবং শরীরের কোন জায়গায় নাপাক লেগেছে তা জানা না থাকে তখন গোসল করা ওয়াজিব।
কখন গোসল করা সুন্নত
যে সমস্ত কারণে গোসল করা সুন্নত সেই সমস্ত কারণগুলো নিচে উল্লেখ করা হলো।
- জুমার দিন জুমার নামাজ আদায় করার জন্য
- ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার নামাজ আদায় করার জন্য
- হজ অথবা ওমরা পালনার্থে এহরাম বাধার জন্য
- আরাফার ময়দানে অবস্থান করার জন্য
গোসলের সুন্নত কয়টি ও কি কি
গোসলের সুন্নত হচ্ছে ছয়টি গোসলের সুন্নতগুলো নিচে উল্লেখ করা হলো।
- গোসল শুরু করার পূর্বে তাসমিয়া অর্থাৎ বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম পড়া।
- পবিত্রতা হাসিল করার নিয়ত করা
- দুই হাতের কব্জি গুলো ওজুর ন্যায় তিনবার করে ধৌত করা
- শরীর অথবা কাপড়ের কোথাও যদি অপবিত্র তথা নাপাকি লেগে থাকে তাহলে সেটাকে পরিষ্কার করা।
- গোসল শুরু করার পূর্বেই অজু করে নেওয়া, আর যদি গোসুলকৃত স্থানটা এরকম হয় যে নিচু জায়গা তাহলে গোসল করার পরে উভয় পা কে ধৌত করে নেওয়া।
- ডান কাঁধে বাম কাঁধে ও মাথার উপর তারতিব অনুযায়ী তিনবার পানি প্রবাহিত করা।
কখন গোসল করা মুস্তাহাব
যে সমস্ত কারণে গোসল করা মুস্তাহাব সেগুলো নিম্নে লিপিবদ্ধ আকারে তুলে ধরা হলো।
- কেউ যখন অন্য ধর্ম থেকে নতুন ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে।
- সিঙ্গা লাগানোর পর গোসল করা
- বছর যখন পূর্ণ হয় অর্থাৎ বালেগ হওয়ার পর গোসল করা।
- যখন কেউ বেহেশ হয়ে যাওয়ার পর নতুন করে হুশ ফিরে আসলে গোসল করা।
- মুর্দা অর্থাৎ মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেওয়ার পর গোসল করা
- শাবান মাসের ১৫ তারিখের রাত্র অর্থাৎ শবে বরাতের রাতে গোসল করা।
- রমজানের শেষ ১০ দিনের রাতের মধ্যে হতে বেজোর রাত্র গুলোতে গোসল করা, যে রাতগুলোতে লাইলাতুল কদর হওয়ার সম্ভাবনা হয়।
- মদিনা মনোয়ারা শহরে প্রবেশ করার জন্য গোসল করা
- মুজদালিফায় অবস্থান করার জন্য 10 জিলহজ সুবহে সাদিকের পর গোসল করা।
- তাওয়াফ করার জন্য গোসল করা
- মিনায় শয়তানকে কংকর মারার জন্য গোসল করা।
- চন্দ্রগ্রহণ সূর্যগ্রহণ কিংবা বৃষ্টি আসার জন্য প্রার্থনার নামাজের জন্য গোসল করা।
- ভয় কিংবা বিপদের সময় নামাজের জন্য গোসল করা।
- কোন অন্যায় পাপ থেকে তাওবা করে ফিরে আসার জন্য গোসল করা।
- কেউ যদি সফরে যায় সেই সফর থেকে ফিরে আসার পর গোসল করা।
- সভা সমাবেশ তথা জনসঙ্গমে যাওয়ার জন্য গোসল করা।
- নতুন কাপড় পড়ার জন্য গোসল করা
- মক্কা শহরে প্রবেশ করার জন্য গোসল করা
- যে ব্যক্তির উপর মৃত্যুদণ্ড করা হয়েছে ঐ ব্যক্তি গোসল করা।
FAQ
প্রশ্ন: মযী বের হলে কি গোসল ফরজ হয়
উত্তর: না, মযী বের হলে গোসল ফরজ হয় না
প্রশ্ন: কতটুকু বীর্য বের হলে গোসল ফরজ হয়
উত্তর: উত্তেজনবশত এক ফোটা বীর্য বের হলেও গোসল ফরজ হয়ে যায়
প্রশ্ন: মযী কাপড়ের লাগলে কি কাপড় নাপাক হয়ে যায়
উত্তর: হ্যাঁ যে জায়গায় মযী লেগেছে ওই জায়গাটা ধৌত করে নিতে হবে
তো বন্ধুরা আমি আজকে আপনাদের সাথে গোসলের যাবতীয় বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করেছি। অর্থাৎ গোসল কত প্রকার ও কি কি গোসলের ফরজ কয়টি ও কি কি গোসলের সুন্নত কয়টি ও কি কি ইত্যাদি সহ গোসলের আরো বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে উপরে বিস্তারিত আলোচনা করেছি, আশা করি আমার এই উপরের আর্টিকেলটি পড়ে আপনি অনেক কিছু শিখতে পেরেছেন, এবং এটাও আশা করি যে আপনি উপরের আর্টিকেল এর মাধ্যমে যা কিছু শিখলেন তার উপর অবশ্যই আমল করার চেষ্টা করবেন।