নুসাইবা নামের ইতিহাস

নুসাইবা নামের ইতিহাস

হ্যালো বন্ধুরা। আজকে আমি আপনাদের সামনে বর্ণনা করবো নুসাইবা নামের ইতিহাস। অর্থাৎ এই নামটির সাথে বয়ে আছে অনেক তথ্য ও জানার বিষয়। আর আমি আজকে আপনাদের সামনে সেই নুসাইবা নামের ইতিহাস বর্ণনা করার জন্যই আজকের আমার এই আর্টিকেলটি লেখা, তাহলে বন্ধুরা চলুন এবার জানা যাক কে সেই নুসাইবা? যে কিনা ইতিহাসের পাতায় এক ইতিহাস হয়ে আছে।


ইসলাম প্রচার প্রসারের জন্য যে সমস্ত নারী সাহাবীগণ তাদের জীবন উৎসর্গ করে দিয়েছেন এবং ইসলামকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য শত বাধা কষ্ট অপেক্ষা করেও ইসলামের প্রতি অটল ও অবিচল রয়েছেন, সেই সমস্ত নারী সাহাবীদের মধ্য হতেই একজন হলেন নুসাইবা বিনতে কাব রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহা।

নুসাইবা বিনতে কাব (রা:) এর বংশ ও পরিচয়

ইতিহাসের পাতায় তিনি নুসাইবা বিনতে কাব নামে পরিচিত হলেও তার উপনাম হচ্ছে হযরত উম্মে উমাইরা। নুসাইবা বিনতে কাব তার পিতার নাম হচ্ছে কাব ইবনে আমর। তিনি মদিনার বিখ্যাত খাজরাজ গোত্রের মেয়ে। আমাদের নবী হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা (সা:) মদিনায় হিজরত করার প্রায় 40 বছর পূর্বে তিনি জন্মগ্রহণ করেন।

নুসাইবা বিনতে কাব (রা:) এর ইসলাম গ্রহণ

নুসাইবা বিনতে কাব (রা:) হলেন ইসলামের প্রথম যুগের একজন নারী সাহাবী। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ইসলামের দাওয়াত দেওয়ার জন্য মক্কা ও তার আশেপাশের সমস্ত অঞ্চল গুলোর মধ্যে মানুষের কাছে ইসলামের বাণী পৌঁছে দেয়ার জন্য গমন করেন এবং কঠোর পরিশ্রম করতে থাকেন, এমনকি তিনি কঠিনতম যন্ত্রনা ও কঠিনতম সময়েরও সম্মুখীন হয়েছেন।

এমন সময় মোহাম্মদ সাঃ তার প্রতিনিধি মুসআব ইবনে উমাইর (রা:)কে ইসলাম প্রচারের জন্য অর্থাৎ ইসলামের বাণী হেদায়েতের বাণী মানুষের মাঝে পৌঁছে দেয়ার জন্য তাকে মদিনায় প্রেরণ করেন। আর সেই রাসুল সাঃ এর প্রতিনিধি মুসআব ইবনে উমাইর এর কাছে নুসাইবা বিনতে কাব (রা:) ইসলাম গ্রহণ করেন। নুসাইবা বিনতে কাআব তিনি রাসূল সাঃ এর প্রতিনিধি মুসআব ইবনে উমাইর এর কাছে শুধু একা ইসলাম গ্রহণ করেননি বরং তার সমস্ত পরিবার এই মুসআব ইবনে উমায়েরের হাত ধরে ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আসেন। আর এভাবেই নুসাইবা বিনতে কাহাব প্রথম যে সমস্ত সাহাবীগণ ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন তাদের মধ্য হতেই একজন নারী আনসারী হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেছিলেন।

ইসলামের জন্য নুসাইবা বিনতে কাব (রা:) এর অবদান

নুসাইবা বিনতেক আব তিনি ওহুদ হুদাইবিয়া খাইবর ও হুনাইনের যুদ্ধ সহ আরো কয়েকটি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন। তবে তিনি ওহুদের যুদ্ধে লৌহবর্ম পরিহিত অবস্থায় যেভাবে রাসূল সাঃ এর পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন এটা ইতিহাসের পাতায় নারী সাহাবীদের মধ্য হতে একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।

ওহুদ যুদ্ধের প্রথম অবস্থায় তিনি অন্যান্য নারী সাহাবীদের মতই সাহাবাদের পানি আনা নেওয়া কেউ অসুস্থ হলে তাকে দেখাশোনা করা এরকম দায়িত্বই নিয়োজিত ছিলেন। আর যখন ওই ওহুদ যুদ্ধের ফলাফল মুসলমানদের অনুকূলে আসতে শুরু করল, তখন সৈনিকরা অর্থাৎ সাহাবারা রাসুল সাঃ এর আদেশ অমান্য করতে শুরু করলো তারা প্রাথমিক পর্যায়ে জয় পরাজয়ের রূপ নিল। আর লোকজন নিজেদেরকে বাঁচানোর জন্য নিজ নিজ ইচ্ছামত পালাতে শুরু করল। আর তখন নুসাইবাব বিনতে কাহাব দেখলেন রাসুল সাঃ এর কাছে কেউ নেই আর তখনই তিনি রাসুল সাঃ কে হেফাজত করার জন্য তরবারি হাতে নিয়ে রাসুল সাঃ এর পাশে এসে দাঁড়ান।

তিনি কাফের শত্রুদের সাথে যুদ্ধ করতে আরম্ভ করলেন, রাসুল সাঃ পরবর্তীতে বলেন নুসাইবা বিনতে কাব পুরুষের থেকেও অনেক ভালো যুদ্ধ করেছে, রাসুল সাঃ বলেন আমি যেদিকেই তাকাই সেদিকেই দেখি নুসাইবা বিনতে কাহব যুদ্ধ করতেছে, ডানেও দেখি নুসাইবা বামেও দেখি নুসাইবা সামনেও দেখি নুসাইবা পিছনেও দেখি নুসাইবা। তখন আমাদের নবীজি মুহাম্মদ সাঃ আল্লাহর কাছে দোয়া করলেন বললেন হে আল্লাহ তুমি নুসাইবা ও তার পরিবারকে জান্নাতে আমার সঙ্গী বানিও।

ওহুদ যুদ্ধের বর্ণনা নুসাইবা এভাবে দেন যে আমি যখন দেখলাম রাসুল সাঃ কে ছেড়ে যখন লোকেরা পালাতে লাগলো তখন নবীজিকে হেফাজত করার জন্য কয়েকজন সাহাবী ছাড়া আর কেউ ছিল না। তখন আমি রাসূল সাঃ এর কাছে আসলাম আর এমন সময় আরো একজন লোক তরবারি হাতে নিয়ে রাসুল সালাম এর সামনে দিয়ে দৌড়ে পালাতে লাগলো, তখন রাসূল সাঃ বললেন তোমার তরবারিটা তাকে দাও যে যুদ্ধ করতেছে তখন ঐ ব্যক্তি তরবারি টা নিক্ষেপ করলে আমি সেই তরবারিটা হাতে তুলে নেই। এবং আমিও আমার ছেলে স্বামী রাসূল সাঃ এর পাশে থেকে যুদ্ধ করে আসলাম কে হেফাজত করার চেষ্টা করি।

ওহুদ যুদ্ধে তখন যুদ্ধ করেছিলেন এমন একজন সাহাবী বলেছেন নুসাইবা ঐদিন যুদ্ধং দেহি এক রূপ ধারণ করেছিলেন, তিনি বলেন ঐদিন নুসাইবা তার কাপড় কমরে পেচিয়ে শত্রুদের ওপর আক্রমণ করেন, সেদিন তিনি প্রায়ই শরীরের ১৩ টি স্থানে ক্ষতবিক্ষত হয়েছিলেন, তিনি ক্ষতবিক্ষত হওয়ার পরেও যুদ্ধে অংশগ্রহণ করা থেকে পলায়ন করেননি।

এভাবেই তিনি রাসুল সাঃ এর পাশে থেকে যুদ্ধ করেছেন, আর যুদ্ধ করতে করতেই তিনি যুদ্ধের ময়দানে অজ্ঞান হয়ে পড়েন, যুদ্ধের শেষে তাকে অজ্ঞান অবস্থায় পাওয়া যায়। আরো একটি আশ্চর্যের ব্যাপার হলো যখন নুসাইবার জ্ঞান ফিরে তখন ও তার মুখে একটি বাক্য ছিল রাসূল সাঃ কি জীবিত আছেন কিনা? তার নিজের চিন্তা না করে তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খবর নিয়েছেন সুবাহানাল্লাহ।

আরো বিস্তারিত জানতে ভিডিও দেখুন।

Previous Post Next Post

نموذج الاتصال