সালাতুত তাসবিহ এই নামাজ সম্পর্কে আমরা অনেকেই হয়তোবা জানিনা আবার যারা জানি তারাও মোটামুটি জানি খুব ভালোভাবে এ সম্পর্কে জানিনা। সালাতুত তাসবিহ এ নামাজটি খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি নামাজ। রাসূলে করীম সা: তার চাচাকে বলেছিলেন হে আমার চাচা আপনি প্রতিদিন একবার সালাতুত তাসবিহ এর নামাজ আদায় করবেন নয়তোবা সাপ্তাহে একবার আদায় করবেন নয়তোবা মাসে একবার আদায় করবেন নয়তোবা বছরে একবার আদায় করবেন আর যদি আপনি তাও না পারেন তাহলে অন্ততপক্ষে জীবনে একবার হলেও সালাতুত তাসবিহ এর নামাজ আদায় করবেন।
অন্য পোস্ট মাদ্রাসা শিক্ষার গুরুত্ব
তাহলে আমরা বুঝতেই পারতেছি যে এই নামাজটি কতটা গুরুত্বপূর্ণ ও ফজিলত পূর্ণ, যেই নামাজ আদায় করার জন্য আমাদের নবী তার চাচাকে বলেছেন যে, আপনি যদি না পারেন তাহলে জীবনে একবার হলেও অন্ততপক্ষে এই নামাজটি আদায় করবেন। তো সম্মানিত পাঠক আজকের এই আর্টিকেলে আমি সালাতুত তাসবিহ এর নামাজ আদায়ের নিয়ম নিয়ত ও ফজিলত ইত্যাদি নিয়েই আলোচনা করব, আশা করি আমার এই পোস্টটি পড়ার পর সালাতুত তাসবিহ এর নামাজ নিয়ে আপনার মনে আর কোন প্রশ্ন থাকবে না।
সালাতুত তাসবিহ নামাজের অর্থ কি
জেনে রাখবেন যে, সালাত অর্থ হচ্ছে নামাজ আর তাসবিহ এর অর্থ হচ্ছে এখানে সুবহানাল্লাহ আলহামদুলিল্লাহ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার, এই তসবিটি এখনো উদ্দেশ্য। এখন সালাতুত তাসবিহ নামাজের পূর্ণ অর্থ হচ্ছে তাসবিহের নামাজ।
সালাতুত তাসবিহ নামাজের নিয়ত
সালাতুত তাসবিহ নামাজের নিয়ত আপনি বাংলায় অথবা আরবীতে দুনুভাবেই করতে পারেন কোন প্রকার সমস্যা নাই।
সালাতুত তাসবিহ নামাজের নিয়ত বাংলায়: আমি এখন চার রাকাত সালাতুত তাসবিহ এর নামাজ আদায় করছি আল্লাহু আকবার এতোটুকু বললেই হবে।
সালাতুত তাসবিহ নামাজের নিয়ত আরবিতে: নাওয়াই তুয়ান নুসাল্লিয়া লিল্লাহি তায়ালা আর বাআ রাকা আতান সালাতিত তাসবিহ।
সালাতুত তাসবিহ নামাজের নিয়ম
সালাতুত তাসবিহ এর নামাজ হচ্ছে চার রাকাত, আর এই চার রাকাত নামাজের মধ্যে উপরে উল্লেখিত তাসবিহটি অর্থাৎ সুবহানাল্লাহ আলহামদুলিল্লাহ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার, এই তাসবীটি চার রাকাত নামাজের মধ্যে ৩০০ বার পাঠ করতে হবে, অর্থাৎ প্রত্যেক রাকাতে ৭৫ বার করে এই তাসবিটি পাঠ করতে হবে। আর এ সালাতুত তাসবিহ নামাজটি দুইটা পদ্ধতিতে আদায় করা যায়, যা আমি আপনাদের সামনে নিচে উল্লেখ করব
সালাতুত তাসবিহ নামাজ আদায়ের নিয়ম ১ম পদ্ধতি: সর্বপ্রথমই আপনি পাক পবিত্র হয়ে ওযু করে নামাজের মুসল্লায় দাঁড়াবেন, অতঃপর তাকবীরে তাহরীমা আল্লাহু আকবার বলে নিয়ত বাধার পর সানা পড়বেন অতঃপর সুরা ফাতেহা পড়ার আগেই ১৫ বার سُبْحَانَ اللهِ وَالْحَمْدُ لِلهِ وَلَا اِلهَ اِلَّا اللهُ وَاللهُ اَكْبَرُ পাঠ করবেন।
তারপর আপনি সূরা ফাতেহা পড়বেন এবং সুরা ফাতেহার সাথে আরও একটি সূরা মিলাবেন, তারপর রুকুতে যাওয়ার আগে আরো দশবার سُبْحَانَ اللهِ وَالْحَمْدُ لِلهِ وَلَا اِلهَ اِلَّا اللهُ وَاللهُ اَكْبَرُ পাঠ করবেন।
রুকুতে গিয়ে রুকুর তাসবীহ অর্থাৎ সুবহানাল্লাহ রাব্বিয়াল আজিম পড়ার পর سُبْحَانَ اللهِ وَالْحَمْدُ لِلهِ وَلَا اِلهَ اِلَّا اللهُ وَاللهُ اَكْبَرُ আরো দশবার পাঠ করবেন, রুকু থেকে দাঁড়িয়ে রব্বানা লাকাল হামদ এটি পড়ার পর سُبْحَانَ اللهِ وَالْحَمْدُ لِلهِ وَلَا اِلهَ اِلَّا اللهُ وَاللهُ اَكْبَرُ আরো দশবার পাঠ করবেন।
অতঃপর আপনি সেজদায় যাবেন সেজদায় গিয়ে সেজদার তাসবিহ অর্থাৎ سُبْحَانَ رَبِّىَ الْأَعْلَى পাঠ করার পর سُبْحَانَ اللهِ وَالْحَمْدُ لِلهِ وَلَا اِلهَ اِلَّا اللهُ وَاللهُ اَكْبَرُ এই তাসবিহটি আরো দশবার পাঠ করুন। তারপর সেজদা থেকে উঠে سُبْحَانَ اللهِ وَالْحَمْدُ لِلهِ وَلَا اِلهَ اِلَّا اللهُ وَاللهُ اَكْبَرُ আরো দশবার পাঠ করুন, তারপর আবার সিজদায় গিয়ে সিজদার তাসবি পাঠ করার পর سُبْحَانَ اللهِ وَالْحَمْدُ لِلهِ وَلَا اِلهَ اِلَّا اللهُ وَاللهُ اَكْبَرُ আরো দশবার পাঠ করুন।
এখানে এক রাকাতে মোট ৭৫ বার তাজবি পাঠ করা হবে, তারপর আপনি অনুররুপ এই রাকাতে যেভাবে তাসবিগুলো পাঠ করেছেন পরের রাকাতেও এভাবে তাসবীহগুলো পাঠ করবেন, তারপর আপনি দুই রাকাতে তাশাহুদ পড়ে সালাম না ফিরিয়ে দাঁড়িয়ে যাবেন অতঃপর প্রথম দুই রাকাত যেভাবে পড়ছেন বাকি দুই রাকাত এভাবে তাসবীহগুলো আদায় করলে মোট চার রাকাতে 300 বার তাসবি পাঠ করা হয়ে যাবে।
সালাতুত তাসবিহ নামাজ আদায়ের নিয়ম ২য় পদ্ধতিঃ প্রথমে নিয়ত বাধার পর ছানা সূরা ফাতেহা ও তার সাথে অন্য আরেকটা সূরা মিলানোর পর তাসবিটি ১৫ বার পাঠ করবেন, তারপর রুকুতে গিয়ে আরো দশবার রুকু থেকে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে আরও দশবার সেজদায় গিয়ে দশবার সেজদা থেকে বসে ১০ বার আবারও সেজদায় দশবার তারপর সেজদা থেকে আবার বসবেন বসে দশবার পাঠ করে তারপর দ্বিতীয় রাকাতের জন্য দাঁড়াবেন, আর এভাবেও এক রাকাতে ৭৫ বার তাসবি পাঠ করা হয়।
অনুরূপভাবে বাকি তিন রাকাতেও এভাবে তাজসবিগুলো পাঠ করবেন তাহলে এসব করলে দেখা যাবে চার রাকাতের মধ্যে ৩০০ বার আসবি পাঠ করা হয়ে গেছে।
সালাতুত তাসবিহ নামাজের ফজিলত
সালাতুত তাসবি নামাজটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও ফজিলত পূর্ণ, তবে রমজান মাসে কেউ যদি সালাতুত তাসবিহ এর নামাজ আদায় করে সেই ক্ষেত্রে সে আরো বেশি ফজিলত ও সবের অধিকারী হবে।
হাদিসের বর্ণনায় এসেছে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু তিনি বর্ণনা করেন তিনি বলেন রাসুল সালাম তার নিজ চাচা আব্দুল মুত্তালিব কে বলেছেন যে, হে আমার চাচা আমি কি আপনার কাছে আসবো না? আমি কি আপনাকে প্রদান করব না? আমি কি আপনাকে এমন দশটি গুণের কথা বলে দেব না? অর্থাৎ যে আমলটি করলে আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন আপনার আগে পরের ইচ্ছাকৃত অনিচ্ছাকৃত নতুন পুরাতন প্রকাশ্য গোপনে যত প্রকার গুনা করেছেন সবগুলোকে মাফ করে দিবে! সুবহানাল্লাহ। আর সেই দশটি গুণই হচ্ছে সালাতুত তাসবিহ এর চার রাকাত নামাজ।
সালাতুত তাসবিহের নামাজ কয় রাকাত
সালাতুত তাসবীহ এর নামাজ হচ্ছে চার রাকাত
সালাতুত তাসবিহ এর নামাজ সুন্নত না নফল
সালাতুত তাসবিহ এর নামাজ হচ্ছে নফল, এটা কোন ধরনের সুন্নত নামাজ নয়।
সালাতুত তাসবিহ এর নামাজ পড়া কি বিদআত
মোটেও সালাতুত তাসবিহ এর নামাজ পড়া বিদআত না, বরং এটি একটি মূল্যবান নফল নামাজ যে নামাজটা পড়ার জন্য আমাদের নবী স্বয়ং তার নিজ চাচাকে আদেশ করেছেন, সে হিসাবে সালাতুত তাসবিহ এর নামাজ কখনোই বিদআত হতে পারে না বরং এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ও ফজিলতপূর্ণ নামাজ।
সালাতুত তাসবিহ এর নামাজ কোন সূরা দিয়ে পড়তে হয়
সালাতুত তাসবিহের নামাজ অমুক সূরা কিংবা ওমুক কেরাত দ্বারা পড়তে হবে এরকম কোন হাদিস বর্ণিত হয়নি, অর্থাৎ আপনি যেই সূরা পারেন সেই সূরা দিয়েই সালাতুত তাসবিহের নামাজ আদায় করতে পারবেন।
সালাতুত তাসবিহ এর নামাজ আদায়ের সময় কখন
সালাতুত তাসবিহ এর নামাজ হচ্ছে একটি নফল নামাজ আর এই নামাজ আপনি যেকোনো সময় আদায় করতে পারবেন, অর্থাৎ যে সমস্ত সময় গুলোর মধ্যে নামাজ পড়া মাতকরুহ ওই সমস্ত সময় গুলো বাদ দিয়ে আপনি যেকোনো সময়েই সালাতুত তাসবিহ এর নামাজ আদায় করতে পারবেন।