ইশরাকের নামাজ কখন পড়তে হয়

ইশরাকের নামাজ কখন পড়তে হয় ইশরাকের নামাজ পড়ার সময় হচ্ছে ফজরের নামাজের পরে যখন সূর্য উদিত হয়, অর্থাৎ সূর্য উদিত হওয়ার 10 থেকে 15 মিনিট পর ইশরাকের নামাজ পড়া সবচেয়ে ভালো এবং এই সময়েই ইশরাকের নামাজ পড়তে হয়। সম্মানিত পাঠক আমি আজকের এই আর্টিকেলে ইশরাক নামাজের সমস্ত কিছু নিয়ে আলোচনা করব, একদম ইশরাক নামাজের নিয়ত বাংলা আরবি সহ এমনকি ইসহাক নামাজের যে সমস্ত অসাধারণ ফজিলত রয়েছে ওইগুলোও আমি আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করব ইনশাল্লাহ, তো ইশরাকের নামাজ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আজকের এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়তে থাকুন।

ইশরাকের নামাজের বাংলা নিয়ত

ইশরাকের নামাজের জন্য বাংলা নিয়ত এভাবে করবেন, আমি ইশরাকের দুই রাকাত নামাজ পড়ার ইচ্ছা করেছি বা আমি ইশরাকের দুই রাকাত নামাজ পড়ার নিয়ত করেছি আল্লাহু আকবার।

ইশরাকের নামাজের আরবি নিয়ত

ইশরাকের নামাজের আরবি নিয়ত হচ্ছে এই, নাওয়াইতুয়ান নুসাল্লীয়া লিল্লাহি তা'আলা রাকআতান সলাতিল ইশরাকি।

ইশরাকের নামাজের জন্য কি আরবি নিয়ত করতে হবে?

ইশরাকের নামাজের জন্য আরবি নিয়ত করতে হবে এমন কোন শর্ত নাই, অর্থাৎ আপনি যদি চান তাহলে বাংলায়ও নিয়ত করতে পারেন আর আপনি যদি চান সে ক্ষেত্রে আরবিতেও নিয়ত করতে পারেন। তবে আরবিতে এই যে নিয়ত করতে হবে এটা কোন শর্ত নাই অর্থাৎ আপনার যেভাবে নিয়ত করার সুবিধা হয় আপনি সেভাবেই নিয়ত করতে পারেন এক্ষেত্রে কোন ধরনের কোন সমস্যা হবে না।

ইশরাকের নামাজ কখন পড়তে হয়

ইশরাকের নামাজ পড়ার নিয়ম

অনেকেই আবার ইশরাকের নামাজ পড়ার নিয়ম সম্পর্কে জানতে চাই, তো সম্মানিত পাঠক ইশরাকের নামাজ পড়ার আলাদা কোন নিয়ম নেই অর্থাৎ আপনি অন্যান্য নামাজ যেভাবে পড়েন ইশরাকের নামাজও ঠিক সেভাবেই পড়বেন কোন ধরনের কোন পার্থক্য নেই। অর্থাৎ আমি বুঝাইতে চাচ্ছি যে অন্যান্য ফরজ নামাজ আপনি যেভাবে পড়েন ইশরাকের নামাজও সেভাবে পড়বেন, অর্থাৎ ইশরাকের নামাজ পড়ার ক্ষেত্রে অন্যান্য নামাজের থেকে আলাদা কোন নিয়ম নেই।

ইশরাকের নামাজ কত রাকাত

ইশরাকের নামাজ কত রাকাত এ ব্যাপারে কোন নির্দিষ্টকরণ নেই, আপনি যদি চান তাহলে দুই রাকাত কিংবা চার রাকাত কিংবা ছয় রাকাত অথবা ৮ রাকাত পড়তে পারে এতে কোন ধরনের সমস্যা নেই অর্থাৎ আপনি যত বেশি পড়বেন আপনারাই তত লাভ হবে।

তবে বাংলাদেশের কিছু ওলামায়ে কেরাম বলে থাকে যে ইশরাকের নামাজ হচ্ছে ৮ রাকাত তবে তাদের এই কথাটা শুদ্ধ নয়।

ইশরাকের নামাজ কোন সূরা দিয়ে পড়তে হয়

ইশরাকের নামাজ কোন সূরা দিয়ে পড়তে হবে কিংবা কোন সূরা দিয়ে পড়ব এটা নিয়ে আমাদের সমাজে প্রায় মত পার্থক্য হয়ে থাকে, তো এই ব্যাপারে বিশুদ্ধ মত হচ্ছে ইশরাকের নামাজ পড়ার জন্য কোন ধরনের নির্দিষ্ট কোন সূরা বা কেরাত নেই আপনি যে সূরা বা কেরাত চান বা ইচ্ছা করেন সেই সূরা বা কেরাতের মাধ্যমেই ইশরাকের নামাজ সম্পন্ন করতে পারেন। অনেকেই আবার বলে থাকে ইশরাকের নামাজ অমুক সুরা দিয়ে পড়তে হবে কিংবা ওমুক সূরা পাঠ করতে হবে তাদের মতটা একেবারেই সম্পূর্ণ ভুল, আশা করি আপনারা তাদের কথায় মনোযোগী হবেন না।

ইশরাকের নামাজ সুন্নত না নফল

ইশরাকের নামাজ হচ্ছে নফল নামাজ, এটা কোন সুন্নত বা ওয়াজিব নামাজ নয়। তবে নফল নামাজের মধ্যে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ নামাজ হচ্ছে তাহাজ্বতের নামাজ, আর তাহাজ্জুতের নামাজের পরেই সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ যে নফল নামাজটা হচ্ছে সেটি হচ্ছে ইশরাকের নামাজ। বিদায় ইশরাকের নামাজ হচ্ছে একটি গুরুত্বপূর্ণ নফল নামাজ এটা সুন্নত নামাজ নয়।

ইশরাক ও চাশতের নামাজ কি একই

ইশরাকের ও চাশতের নামাজ কি একই? এটা নিয়েও আমাদের সমাজে অনেক ধরনের মতপার্থক্য হয়ে থাকে। তো সৌদি আরবের ওলামায়ে কেরামের মতে ইশরাক ও চাশতের নামাজ হচ্ছে একই নামাজ অর্থাৎ ইশরাকের অপর নামই হচ্ছে চাশত। তবে এ ব্যাপারে দুটি মত পাওয়া যায়।

একটি হচ্ছে ফজরের নামাজের পর সূর্য উদিত হওয়ার 10-15 মিনিট পরে যে নামাজটা পড়া হয় এটাকে বলা হয় ইশরাকের নামাজ। আর সূর্যের আলোটা যখন একটু দৃঢ় হয় অর্থাৎ আটটা নয়টার দিকে যে নামাজটা পড়া হয় এটাকে বলা হয় চাশতের নামাজ, এই মতটা সঠিক।

ইশরাকের নামাজ পড়ার ফজিলত

ইশরাকের নামাজের অসংখ্য-অগণিত ফজিলত হাদিসের মাধ্যমে বর্ণিত হয়েছে, এরমধ্য হতে আমি কয়েকটি ফজিলত আমি আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করব।

আবু জর গিফারী বলেন প্রত্যেকটা মানুষের শরীরে যত রকমের জোড়া রয়েছে প্রত্যেকটা জোড়ার বিনিময় প্রতিদিন সদকা দেওয়া উচিত, অন্য তাই উটা বসা কিংবা সব সময় শরীরের সদকার জন্য সুবহানাল্লাহ আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহু আকবার এই তাসবীহগুলো পাঠ করতে হবে। কিন্তু যদি কোন ব্যক্তি ইশরাকের দুই রাকাত নামাজ আদায় করে তাহলে তার সারাদিনের জন্য সমস্ত শরীরের সদকা আদায় হয়ে যাবে! সুবাহানাল্লাহ।

হাসান ইবনে আলী রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বর্ণনা করেন তিনি বলেন আমি রাসূলে করীম সা:কে এই কথা বলতে শুনিয়াছি, রাসুল সাঃ বলেছেন যদি কোন ব্যক্তি ফজরের নামাজের পরে আল্লাহপাকের তাসবিহ অর্থাৎ জিকির-আজকার করতে থাকে এমনকি সূর্য উদিত হলে দুই রাকাত বা চার রাকাত ইশরাকের নামাজ আদায় করে তাহলে ওই ব্যক্তির চামড়াকেও জাহান্নামের আগুন স্পর্শ করতে পারবে না, সুবহানাল্লাহ।

হযরত আনাস ইবনে মালেক রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু থেকে হাদীসটি বর্ণিত তিনি বলেন যে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন যদি কোন ব্যক্তি ফজরের নামাজ জামাতের সহিত আদায় করে এবং সূর্য উঠার আগ পর্যন্ত মসজিদে অবস্থান করে আল্লাহ পাকের জিকির করতে থাকে তাসবি পাঠ করতে থাকে, এবং সূর্য ওঠার পর দুই রাকাত বা চার রাকাত নফল নামাজ আদায় করে তাহলে আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন ওই ব্যক্তির আমলনামায় একটি পরিপূর্ণ ওমরা বা কবুল হজের সওয়াব দান করবেন, সুবাহানাল্লাহ।

হযরত আবু দারদা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন যে আল্লাহ তাআলা বলেছেন ওহে আদম সন্তানের তোমরা দিনের শুরুতে অর্থাৎ ফজরের পরে সূর্য উঠার পর চার রাকাত নামাজ পড়তে অক্ষম হইয়ো না, আমি তোমার সারাদিনের কাজগুলোকে পরিপূর্ণ করে দেবো। অর্থাৎ আল্লাহতালা বলতেছেন হে আদম সন্তান তোমরা দিনের শুরুতে চার রাকাত নামাজ আদায় কর আমি আল্লাহ তোমাকে সারা দিনের কাজগুলোকে পরিপূর্ণ করে দেবো।

ঈদের দিন কি ইশরাকের নামাজ আদায় করা যাবে?

ঈদের দিন ইশরাকের নামাজ আদায় করা যাবে কিনা এ ব্যাপারে মাসলা হচ্ছে, ঈদের দিন ফজরের নামাজের পর থেকে ঈদের নামাজের আগ পর্যন্ত কোন প্রকার নফল নামাজ অর্থাৎ ইশরাকের নামাজ আদায় করা যাবে না, আর যদি কেউ সেটা আদায় করে তাহলে সেটা হবে মাকরুহে তাহরীম অর্থাৎ হারাম পর্যায়ে চলে যাবে। ঈদের দিন ঈদের নামাজের আগে অর্থাৎ ফজরের নামাজের পর থেকে ঈদের নামাজ পড়ার আগ পর্যন্ত আপনি কোন ধরনের নফল নামাজ পড়তে পারবেন না।

হা তবে যখন আপনি ঈদের নামাজ পড়ে ফেলবেন তখন আপনি ইশরাকের নামাজ কিংবা চাশতের নামাজ পড়তে পারবেন বাড়িতে কিংবা মসজিদে সে ব্যাপারে কোন সমস্যা নেই, তবে ঈদের নামাজের আগে কোন প্রকার নফল নামাজ পড়তে পারবেন না।
Previous Post Next Post

نموذج الاتصال