হযরত আবু বকর রাঃ এর জীবনীর “ দ্বিতীয় পর্ব “

আসসালামু আলাইকুম কেমন আছেন সবাই?  আশা করি ভাল আছেন, আমিও আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহর রহমতে ভালো আছি। আজকে আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করব হযরত আবু বকর রাঃ এর জীবনীর দ্বিতীয়  পর্ব নিয়ে কিছু কথা । হযরত আবু বকর রাঃ সন্ন্যাসী বুহায়রার সঙ্গ এর জীবনী সম্পর্কে জানতে এবং আপনার ছোট্ট সোনামণিকে হযরত আবু বকর রাঃ সন্ন্যাসী বুহায়রার সঙ্গ এর জীবনী সম্পর্কে জানাতে আমার আজকের আর্টিকেলটি পড়তে থাকুন।

সন্ন্যাসী বুহায়রার সঙ্গে আবু বকর রাঃ এর ঘটনা

খাসায়েসুল কুবরা গ্রন্থে আল্লামা জালালুদ্দীন সুয়ুতি লিখেছেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে যৌবনকালেই হযরত আবু বকর রাযিয়াল্লাহু আনহুর বন্ধুত্বপূর্ণ ও সুসম্পর্ক ছিল। ইবনে মাজা হযরত ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে হযরত আবু বকর রাযিয়াল্লাহু আনহু সিরিয়ার এক বাণিজ্য-সফরে ছিলেন। তখন তাঁর বয়স ছিল আঠারো বছর এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বয়স ছিল বিশ


অন্য পোস্ট

বছর। পথিমধ্যে তাঁরা এক কুলবৃক্ষের (বড়ইগাছ) কাছে অবতরণ করেন। তিনি বৃক্ষের ছায়ায় বসে গেলেন আর আবু বকর রাযিয়াল্লাহু আনহু বুহায়রা নামক জনৈক সন্ন্যাসীর সঙ্গে কথা বলতে গেলেন। তাঁকে দেখে বুহায়রা প্রশ্ন করলেন,

—বৃক্ষের ছায়ায় কে?

—মুহাম্মাদ ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে আবদুল মুত্তালিব। —আল্লাহর কসম! সে আল্লাহর নবী। কেননা, এই কুল গাছের ছায়ায় বসেছিলেন হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম। এরপর আজ পর্যন্ত আর কেউ ওইখানে বসেনি।

হযরত আবু বকর রাযিয়াল্লাহু আনহুর মনে বিষয়টি বদ্ধমূল হয়ে গেল। এরপর যখন মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নবুওয়াত প্রাপ্ত হলেন, তখন হযরত আবু বকর রাযিয়াল্লাহু আনহু নির্দ্বিধায় তাঁর অনুসরণ করলেন ।

ইবনে মাজার এই সনদ কেউ কেউ দুর্বল বললেও ইবনে হাজার তাঁর আল-ইসাবা গ্রন্থে এ সম্পর্কে বলেন যে, এই বর্ণনা বিশুদ্ধ হলে এটা আবু তালেবের সঙ্গে সফরের পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দ্বিতীয় সফর হবে।

ইবনে আসাকির কাব থেকে বর্ণনা করেন যে, হযরত আবু বকর রাযিয়াল্লাহু আনহুর ইসলাম গ্রহণের কারণ ছিল ঐশী নির্দেশ। ঘটনাটি ছিল এ রকম—

হযরত আবু বকর রাযিয়াল্লাহু আনহু বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে সিরিয়া গিয়েছিলেন। সেখানে অবস্থানকালে তিনি একটি স্বপ্ন দেখে তার অর্থ জানার জন্য বুহায়রা নামে এক সন্ন্যাসীর কাছে যান এবং তার কাছে স্বপ্নের ব্যাখ্যা জানতে চান। বুহায়রা তাঁর


সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে জানলেন, তিনি মক্কার কুরাইশ বংশের লোক এবং ব্যবসা-বাণিজ্য করতেই সিরিয়া এসেছেন। এসব শুনে সন্ন্যাসী তাকে জানালেন, তিনি যে স্বপ্ন দেখেছেন, সেই সত্য স্বপ্নের অর্থ হচ্ছে, তাঁর কওমে আল্লাহ একজন নবী পাঠাবেন। তিনি সেই নবীর উজির হবেন এবং সেই নবীর ওফাতের পর তিনি তাঁর খলীফা হবেন। এ ঘটনার কথা হযরত আবু বকর রাযিয়াল্লাহু আনহু কাউকেই কিছু জানালেন না, বরং নিজের কাছেই গোপন রাখলেন। এরপর যখন মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নবুওয়াত পেলেন, তখন তাঁর কাছে এসে তাঁকে প্রশ্ন করলেন, ইয়া মুহাম্মাদ! আপনার কাছে আপনার দাবির স্বপক্ষে কোনো দলিল আছে কী? স্বভাবসুলভভাবে নবীজি উত্তর দিলেন, আমার দলিল সেই স্বপ্ন, যা আপনি সিরিয়াতে থাকতে দেখেছিলেন!


এ ছাড়াও তাবারানীর বর্ণনাতে জুবায়ের ইবনে মুতাযিম তাঁর নিজের সিরিয়া সফরের সময়ের একটি ঘটনা বর্ণনা করেন। সেখানে একজন কিতাবধারীর সঙ্গে দেখা হলে সে তাঁকে বাড়ি নিয়ে গেল । তারপর তাঁকে কতকগুলো প্রাচীন আমলের অঙ্কিত চিত্র দেখাল, যার মধ্যে হযরত নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চিত্রও ছিল এবং তাঁর পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা এক ব্যক্তিও ছিল ।


কিতাবধারী ব্যক্তিটি আমার প্রশ্নের উত্তরে জানাল, নবীর ছবির পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা এই ব্যক্তি নবী নন; তবে তাঁর পরে কেউ নবী হলে সেই ব্যক্তি হতো। কিন্তু তিনি শেষ নবী; এজন্য এই ব্যক্তি নবীর ইন্তেকালের পর তাঁর খলীফা হবেন। জুবায়ের বলেন, আমি দেখলাম যে, এটা হযরত আবু বকর রাযিয়াল্লাহু আনহুর ছবি।


ওয়াসাল্লামের পিতা আবদুল্লাহর ওপরের বংশলতিকায় দেখা যায় যে, মুররাহ ছিলেন তাঁদের উভয়ের ষষ্ঠতম পূর্বপুরুষ। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চেয়ে বয়সে তিনি দুই বৎসরের ছোট ছিলেন।


রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন নবুওয়াত পান, তখন তিনি ব্যবসায়িক কাফেলার সঙ্গে ইয়েমেনে ছিলেন। কুরাইশ বংশের ইতিহাস ও বংশলতিকা, শাখাসমূহ এবং পরিবারবর্গের মধ্যে সম্পর্কের বিষয়ে তিনি ছিলেন সর্বসম্মতিক্রমে একমাত্র বুৎপত্তিশীল ব্যক্তি এবং উপজাতীয় সম্পর্কের সংস্থাটির মধ্যে ‘ওকনায়ের’ দায়িত্ব তাঁর ওপর ছিল। ফলে তাঁর মতামত ছাড়া ‘দিয়ত’—অর্থাৎ খুন হয়ে যাওয়া ব্যক্তির জন্য রক্তপণ আদায়ের ক্ষেত্রে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া যেত না।


কুরাইশ-নেতারা মহানবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওয়াত পাওয়ার বিষয়টি নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে তাঁর মতামতের অপেক্ষায় ছিল। ফলে ইয়েমেন থেকে ফেরার পর আবু জাহাল, উতবা এবং শাইবাসহ প্রধান প্রধান নেতৃবর্গ আবু বকর রাযিয়াল্লাহু আনহুর বাড়িতে দেখা করতে আসে। কুশলাদি বিনিময়ের পর আবু বকর সিদ্দীক কোনো নতুন খবর আছে কিনা জানতে চাইলে তারা আবু তালেবের এতিম ভ্রাতুষ্পুত্র মুহাম্মাদ কর্তৃক নবুওয়াতের দাবির কথা জানাল। এ কথা শুনে তিনি এত উত্তেজনা বোধ করেন যে, প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই কুরাইশ নেতাদের বিদায় দিয়ে তিনি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে দেখা করতে যান। মহানবীর কাছে গিয়ে তিনি সত্যের পয়গাম সম্পর্কে জানতে চান এবং সঙ্গে সঙ্গেই ইসলাম গ্রহণ করেন।


রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যাকেই আমি ইসলাম গ্রহণের আহবান জানিয়েছি, তিনিই কিছু না কিছু ইতস্তত করেছেন কিন্তু আবু বকর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) অতুলনীয়। কারণ, কোনোরূপ ইতস্তত না করেই তিনি আমার আহবানে সাড়া দিয়েছেন। ফলে, প্রথম মুসলিম মহিলা হিসাবে উম্মুম মুমিনীন হযরত খাদিজা রাযিয়াল্লাহু আনহা, প্রথম কিশোর হিসাবে হযরত আলী এবং প্রথম বয়স্ক পুরুষ হিসাবে হযরত আবু বকর রাযিয়াল্লাহু আনহুমা মুসলমান হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। প্রথম দাসদের মধ্যে হযরত যায়েদ বিন হারিস রাযিয়াল্লাহু আনহু ইসলাম গ্রহণ করেন। সপ্তম দিনে হযরত সাদ বিন আবি ওয়াক্কাস এবং তারপরে হযরত উসমান, জুবায়ের, তালহা, আবদুর রহমান বিন আউফ রাযিয়াল্লাহু আনহুম প্রমুখ ।


প্রথম সারির কুরাইশ-নেতৃবৃন্দের ইসলাম গ্রহণের পেছনে হযরত আবু বকরের অবদান স্বীকার না করে পারা যাবে না। এরা সবাই ছিলেন ‘সাবিকুনাল আওয়ালুন’ বা প্রথম ইসলাম গ্রহণকারী।


উপসংহার : তো বন্ধুরা আজকের আর্টিকেলে আমি আপনাদের সাথে
সন্ন্যাসী বুহায়রার সঙ্গে আবু বকর রাঃ এর ঘটনা এর দ্বিতীয় পর্ব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি, এবং আমি আশা করছি হযরত আবু বকর রাঃ এর জীবনীর বাকি পর্বগুলো পড়তে আমার ওয়েবসাইটটির সাথেই থাকবেন।

Previous Post Next Post

نموذج الاتصال