আসসালামু আলাইকুম কেমন আছেন সবাই?
আশা করি ভাল আছেন, আমিও আলহামদুলিল্লাহ
আল্লাহর রহমতে ভালো আছি। আজকে আমি আপনাদের সাথে
শেয়ার করব হযরত আবু বকর রাঃ এর জীবনীর শেষ পর্ব
নিয়ে কিছু কথা । হযরত আবু বকর রাঃ বন্ধুর প্রতি
ভালোবাসাএর জীবনী সম্পর্কে জানতে এবং আপনার
ছোট্ট সোনামণিকে হযরত আবু বকর রাঃ বন্ধুর প্রতি
ভালোবাসা এর জীবনী সম্পর্কে জানাতে আমার আজকের
আর্টিকেলটি পড়তে থাকুন।
বন্ধুর প্রতি ভালোবাসা
খানা প্রস্তুত করে উম্মুল খায়ের রাযিয়াল্লাহু আনহা তাঁকে
খাওয়ার জন্য ডাকলেন। কিন্তু তিনি কোনোভাবেই কিছুই মুখে
দিতে রাজি হলেন না। তাঁর মুখে এক কথা—আমার প্রিয় নবী
কেমন আছেন? তিনি কি সুস্থ আছেন? আমার প্রিয় নবীর
কোনো খবর না পাওয়া পর্যন্ত আমি কোনো খাবার মুখে দেব না ।
কিন্তু কে দেবে তাঁর খবর? তখন যাঁরা ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন,
তাঁরা অত্যাচারের ভয়ে সব খবর গোপন রাখতেন।
শুধুমাত্র কিছু সংখ্যক মুসলমানই এই গোপন খবর জানতেন।
উম্মুল খায়ের রাযিয়াল্লাহু আনহা যখন কারও কাছে কোনো
খবর না পেয়ে খুব অস্থির হয়ে গেলেন, তখন হযরত
আবু বকর রাযিয়াল্লাহু আনহু ওমর
(তিনি তখনো মুসলমান হননি)-এর বোন উম্মে জামিলের নিকট
গিয়ে খবর জেনে আাসতে বললেন। বেচারি ছেলের কষ্ট সহ্য
করতে না পেরে অবশেষে উম্মে জামিলের নিকট গিয়ে রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অবস্থা জানতে চাইলেন ।
উম্মে জামিল রাযিয়াল্লাহু আনহা সাধারণ নিয়মানুসারে নিজের
ইসলাম গ্রহণকে কঠোরভাবে গোপন রেখে বললেন,
আমি জানি, কে মুহাম্মাদ আর কে আবু বকর! তবে তোমার
ছেলের ওপর জুলুমের খবর শুনে মনে দুঃখ পেলাম।
অনুমতি পেলে তাঁকে দেখে আসতে পারি
উম্মে খায়ের তাঁকে সঙ্গে নিয়ে বাড়িতে এলেন।
হযরত আবু বকরের শরীরের করুণ অবস্থা দেখে তিনি
নিজেকে আর সামলাতে পারলেন না; কান্নায় ভেঙে পড়লেন
এবং এজন্য দায়ীদের ব্যাপারে আল্লাহর কাছে শাস্তির দুআ
করলেন।
হযরত আবু বকর রাযিয়াল্লাহু আনহু বললেন, আমার মাহবুব
নবী কেমন আছেন? তিনি সুস্থ আছেন তো? উম্মে জামিল
তাঁর মায়ের দিকে ইশারা করে বললেন, তিনি তো শুনবেন।
কিন্তু আবু বকর মায়ের ব্যাপারে তাঁকে অভয় দিলে তিনি
বললেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভালো আছেন
এবং তিনি আরকাম রাযিয়াল্লাহু আনহুর ঘরে আছেন।
হযরত সিদ্দীকে আকবর শুনে বললেন, কসম আল্লাহর!
আমি ওই পর্যন্ত কিছুই খাব না বা পান করব না,
যে পর্যন্ত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে
সাক্ষাৎ না করব।
এ কথার তো কোনো নড়চড় হবে না। সুতরাং উম্মে খায়ের
ও উম্মে জামিল রাযিয়াল্লাহু আনহুমা রাত গভীর হওয়ার
অপেক্ষা করতে লাগলেন। অবশেষে রাস্তা দিয়ে লোক-চলাচল
বন্ধ হয়ে গেলে তাঁরা তিনজন আরকাম রাযিয়াল্লাহু আনহুর
বাড়ির উদ্দেশে রওনা হয়ে অনেক কষ্টে সেখানে পৌঁছলেন।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘরেই ছিলেন।
দুই বন্ধ সাক্ষাৎ হওয়ামাত্র উভয়ে উভয়কে জড়িয়ে ধরে ভীষণ
কান্নায় ভেঙে পড়লেন—একজন কাঁদলেন প্রিয় নবী ভালো
আছেন, সুস্থ আছেন, সে কারণে; আর অপরজন কাঁদলেন
তাঁর সাথী প্রাণে বেঁচে আছেন, সে কারণে।
আর তাঁদের উভয়ের দুঃখে ও কান্নায় উপস্থিত সকল মুসলমান,
যাঁরা প্রিয় নবীজিকে দেখতে উপস্থিত হয়েছিলেন,
তাঁরাও কাঁদতে লাগলেন ।
অবশেষে কান্না থামলে হযরত আবু বকর রাযিয়াল্লাহু আনহু
তাঁর মাকে দেখিয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে
বললেন, হুজুর, এটা আমার মা। আপনি আল্লাহর নিকট তাঁর
হেদায়াতের জন্য দুআ করে তাঁকে দাওয়াত দিলে তিনি ইসলাম
কবুল করবেন।
হযরত আবু বকর রাযিয়াল্লাহু আনহু শুধু সম্ভ্রান্ত কুরাইশ-নেতাই
ছিলেন না, সেই সঙ্গে বড় ব্যবসায়ীও ছিলেন।
মাত্র আঠারো বছর বয়সে তিনি বাণিজ্য-কাফেলা নিয়ে বিদেশ
সফরে যান। ইরাক ও ইয়েমেনে তিনি অনেকবার
বাণিজ্য -কাফেলা নিয়ে সফর করেছেন।
হযরত বেলাল রাযিয়াল্লাহু আনহুকে তিনি অবর্ণনীয় অত্যাচার
সহ্য করতে দেখে তাঁর মনিবের কাছ থেকে উচ্চ মূল্যে কিনে
নিয়ে তাঁকে মুক্ত-স্বাধীন করে দেন। তাঁর সমস্ত অর্থ-সম্পদ
তিনি ইসলামের জন্য অকাতরে খরচ করেছেন।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও বলেছেন যে,
হযরত খাদিজা এবং হযরত আবু বকর-এর সম্পদে আমার
যত উপকার হয়েছে, অপর কারও সম্পদে তেমনটি হয়নি।
এজন্য
বন্ধুতিনি বলেছেন, সকলের সম্পদের বদলা তিনি দুনিয়াতেই
দিয়ে গেছেন, শুধু আবু বকর-এরটা বাদে। তাঁর বদলা
আল্লাহ তাঁকে কেয়ামতের দিন দেবেন।
আমরা ভাগ্যবান যে, আমাদের প্রথম খলীফা ছিলেন হযরত
আবু বকর রাযিয়াল্লাহু আনহু। আল্লাহ তাঁর উপর সীমাহীন
রহমত নাজিল করুন এবং তাঁর ওপর সন্তুষ্ট থাকুন। আমীন ।
★ উপসংহার : তো বন্ধুরা আজকের আর্টিকেলে আমি
আপনাদের সাথে হযরত আবু বকর রাঃবন্ধুর প্রতি ভালোবাসা
এর জীবনী এর শেষ পর্ব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার
চেষ্টা করেছি, এইরকম আরো ঘটনা পড়তে আমার
ওয়েবসাইটটির সাথেই থাকবেন।