আসসালামু আলাইকুম কেমন আছেন সবাই আলহামদুলিল্লাহ আমিও আল্লাহর রহমতে ভালো আছি আজকে আমি আপনাদের সাথে তওবা কবুল হওয়ার শর্ত নিয়ে আলোচনা করব !দুনিয়াতে আমরা কমবেশি সকলেই পাপ কাজে লিপ্ত আছি ! তওবার মাধ্যমে আল্লাহ আমাদের সকলের পাপ গুলো মাফ করুন !
আল্লাহ্ হকের ক্ষেত্রে প্রথম শর্ত এই যে, (আন ইয়াকলাআ আনিল মা’সিয়াহ।) সর্বপ্রথম ঐ গুনাহ্ হইতে পৃথক হইয়া যাইবে। এই নয় যে, নিজে গুনাহে লিপ্ত, অথচ মুখে তওবা-তওবা করিতেছে । যেমন কোন কোন লোক এরূপ বলে থাকে যে, লা-হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা, কি বেহায়াপনা। কি যে উলঙ্গপনার যমানা আসিয়া গেল! এভাবে একদিকে মেয়েদের দিকে দেখিতেছে, আরেক দিকে লা-হাওলা লা-হাওলাও পড়িয়া যাইতেছে। এমন লা-হাওলা খোদ আমাদের নফছের উপর লা-হাওলা পাঠ করে। অতত্রব, প্রথম শর্ত এই যে, গুনাহ ত্যাগ করিয়া দিবে ।
দ্বিতীয় শর্ত হইল (আন ইয়ানদামা আলাইহা) ঐ গুনাহের কারণে অন্তরের মধ্যে যেন অনুতাপ অনুশোচনা পায়দা হইয়া যায়। নাদামতের অর্থ ইহাই যে, অন্তরের মধ্যে যেন একটা বেদনা ও কষ্ট অনুভব হয় যে, হায়, আমি এ কি নালায়েকি করিলাম? এত বড় দয়াবান মালিক ও মেহেরবান পালনকর্তার হক্ আমি কেন আদায় করিলাম না? হাকীমুল-উম্মত হযরত থানবী (রঃ) বলেন, দোযখ যদি না-ও থাকিত তবুও এরূপ এহ্ছানকারী, এত অনুগ্রহকারী মালিকের নাফরমানী করা বান্দার জন্য ভদ্রতা ও মানবতা বিরোধী কাজ হইত। আল্লাহ্পাকের দয়া ও মেহেরবাণী আমাদের উপর এত বেশী যে, ইহার পর যেকোন ভদ্র ও সভ্য মানুষের ইহাই স্বাভাবিক তাকিদ হওয়া উচিত ছিল যে, এমন মালিককে কিছুতেই আমরা নারাজ করিব না।
সুবহানাল্লাহ, ইহা ত মহব্বতের দাবী। যেমন কোন মেহেরবান পিতা নিজের সন্তানদিগকে ডাঙা ত মারে না, কিন্তু যেহেতু সন্তানদের প্রতি তাহার মায়া-দয়া অঢেল, তাই তাহার ভদ্র ছেলেটি ভাইদিগকে লক্ষ্য করিয়া বলিতেছে, খবরদার, তোমরা আব্বাকে নারাজ করিও না। দেখ, আমাদের প্রতি আব্বার কত এহ্সান, কত দয়া।
তওবার তৃতীয় শর্ত হইল, (আন ইয়া ঝিমা আঝমান জাঝিমান আন লা-ইয়াউদা আলাইহা) পাক্কা নিয়ত করিবে যে, আয় আল্লাহ্, আর কখনও এই গুনাহ্ করিব না। অন্তর দিয়া এ প্রতিজ্ঞা করিবে যে, প্রাণও যদি বাহির হইয়া যায় তবু আর কখনও এই পাপের কাছেও যাইব না। তওবার সময় পুনরায় গুনাহ্ না করার পাক্কা এরাদা থাকা চাই। পরে যদি কখনও তওবা ভঙ্গ হইয়া যায় তবে এই প্রতিজ্ঞা ভঞ্জন পূর্ব-কৃত প্রতিজ্ঞার অস্তিত্বের বিলোপকারী হইতে পারে না। অর্থাৎ প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ হওয়া এই-কথার প্রমাণ নয় যে, (ইতিপূর্বে) প্রতিজ্ঞাই করা হয় নাই। এরাদা (সংকল্প) করা এক জিনিস, আর এরাদা ভঙ্গ হইয়া যাওয়া আরেক জিনিস। তাই তওবার সময় তওবা ভঙ্গ না করার এরাদা হওয়া চাই । পরে যদি ঐ তওবা ভঙ্গও হইয়া যায়, ইহাতে পূর্বে কৃত এরাদা অস্তিত্বহীন হইয়া যাইবে না। সেই তওবা কবূল হইয়া গিয়াছে, যদিও পরে তাহা লক্ষ- লক্ষ বারও ভঙ্গ হইয়া যাউক না কেন ।
উপরোক্ত এই বিষয়টি আমি ঢাকায় বয়ান করিয়াছিলাম। বয়ানের পর আমি এক ব্যক্তিকে বলিয়াছিলাম যে, মাথায় দেওয়ার জন্য এক শিশি তেল নিয়া আসিবে, ভুলিয়া যাইবে না, কিন্তু সে বলিল, ভুলার এরাদা নাই। ইহাতে আমি খুব আনন্দিত হইলাম যে, লোকটি আমার বয়ান ঠিক মত বুঝিয়াছে । অর্থাৎ অদ্য যে গুনাহ্ করিব না, এই মুহূর্তে এই ইচ্ছা-ভঙ্গের ইচ্ছা না থাকা চাই। বস্, তওবা কবুল হওয়ার জন্য এতটুকু যথেষ্ট। যদিও শয়তান মনের মধ্যে এই অঅছা দিতে থাকে যে, আরে, তুমি ত বারবার তওবা ভঙ্গ করিতে থাক। তওবা করার সময় তওবা-ভঙ্গের এরূপ অঅছার কারণে
কোন ক্ষতি হইবে না । যদিও নিজের মানবীয় দুর্বলতা ও জীবনের বারংবারের অভিজ্ঞতার ফলে খোদ আপনারও এরূপ বিশ্বাস লাগে যে, তওবার এই সংকল্পের উপর আমি টিকিয়া থাকিতে পারিব না, তবুও শুধু তওবার সময় এ সংকল্প ভঙ্গের সংকল্প না-থাকিলেই হইল। তাহা হইলে ইহা হইবে নিজের দুর্বলতা অনুভব করা বা দুর্বলতা প্রতি খেয়াল যাওয়া। ইহা সংকল্প ভঙ্গের সংকল্প করণ নহে । বান্দার মধ্যে নিজের দুর্বলতার খেয়াল ত জাগেই যে, হায়, আমার নালায়েকীর দরুণ হাজার হাজার বার আমার হাজার-হাজার সংকল্প চূর্ণ হইয়া গিয়াছে । এমতাবস্থায় আল্লাহ্পাকের নিকট ইহাই আরয করিবে যে, হে আল্লাহ্, আমি যে এই তওবার সংকল্প করিয়াছি, তাহা আমার শক্তির উপর ভরসা করিয়া নয়, বরং আপনার উপর ভরসা করিয়া আমি এ সংকল্প করিতেছি। অন্যথায় আমার এ বাহুদ্বয় তো আমার জীবনে বহুবার পরীক্ষাকৃত ।
یہ بازو میرے آزمائے ہوئے ہیں
ইয়ে বাঝু মেরে আঝমায়ে হোয়ে হেঁয় ।
আয় আল্লাহ্, আমার এই হাত ও বাহু, আমার প্রতিজ্ঞা ও সংকল্প বহুবার পরীক্ষাকৃত। আমরা দুর্বল, আপনি আমাদিগকে দুর্বল করিয়া সৃষ্টি করিয়াছেন।
উপসংহার
আল্লাহ আমাদের সকলকে হেদায়েত দান করুক! আল্লাহ যেন আমাদেরকে তওবা করার সুযোগ দেন! আল্লাহ যে কত মহান তা আমরা আমাদের আশেপাশের আল্লাহর নেয়ামতের দিক তাকালেই বুঝতে পারবো! আশা করি এই আর্টিকেলটি পরে আপনারা অনেক উপকৃত হয়েছে!এরকম আরো ইসলামিক বিষয়ে জানতে আমার এই ওয়েবসাইটটির সাথেই থাকুন!