আসসালামু আলাইকুম কেমন আছেন সবাই আশা করি আল্লাহর রহমতে সবাই অনেক ভাল আছেন ,আমিও আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি । আজকে আমি আপনাদের সাথে আলোচনা করব তারাবি নামাজ ফজিলত এবং গুরুত্ব নিয়ে ।
দেখতে দেখতে আবার শুরু হয়ে যাবে রহমত, মাগফেরাত ও নাজাতের মাস রমজান। এই মাসের প্রধান গুরুত্ব পূর্ণ দুটি ইবাদত হলো সিয়াম ও কিয়াম।
সিয়াম বা রোজা হলো আল্লাহতালা কে সন্তুষ্টির জন্য সুবহে সাদিক হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার, দাম্পত্য মিলন ও রোজা ভঙ্গ হওয়ার সকল কাজ হতে দূরে থাকা। আর কিয়াম হলো রাতে এশার নামাজের সাথে তারাবির নামাজ।
‘ আরবি তারভিহাতুন থেকে এসেছে তারাবিহ’ শব্দটি, যার অর্থ, প্রশান্তি লাভ করা, এবং বিশ্রাম করা।
তারাবি নামাজে চার রাকাত পর পর যেহেতু একটু বিশ্রাম নিয়ে দোয়া ও তাজবীদ পাঠ করা হয়, তাই এই নামাজকে সালাতুত তারাবিহ বা তারাবি সালাত বলা হয়।
তারাবির নামাজ পড়তে হয় এশার ফরজ ও সুন্নত সালাতের পর এবং বেত্রের নামাজের আগে আদায় করা হয়। তারাবির সালাত সুন্নাতে মুআক্কাদাহ। এই নামাজ গুরুত্বের দিক থেকে ওয়াজিবের কাছাকাছি।
তারাবির ফজিলত সম্পর্কে হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুল মোহাম্মদ (সা:) বলেন, যে লোক ঈমানের সঙ্গে নেকীর আশায় তারাবির নামাজ আদায় করবে, তার পিছনের সকল গুনাহ মাপ করা হবে। (বুখারী ও মুসলিম)
রাসুল মোহাম্মদ (সা:) তারাবি নামাজকে কতটুকু গুরুত্ব দিয়েছেন এবং তারাবি নামাজ যেন ফরজ না হয়ে যায়, যেটা পড়তে উম্মতের কষ্ট হতে পারে, সেটা রাসুল মোহাম্মদ (সা:) এর একটি হাদিসে দিয়েই বোঝা যায়।
হজরত আয়েশা (রা.) বলেছেন, রাসুলুল্লাহ (সা:) একবার রোজার মাসে রাত্রি বেলা মসজিদে নববীতে তারাবি নামাজ আদায় করলেন। উপস্থিত সকল লোকজনও তার সাথে নামাজ আদায় করলেন। একই রকম ভাবে তার পরের দিনেও সালাত আদায় করলেন এবং মানুষজন অনেক বেশি হলো। অতঃপর তৃতীয়দিন এবং চতুর্থ দিনেও লোকজন একত্রিত হলো। কিন্তু রাসুল মোহাম্মদ (সা:) হুজরা থেকে বেরিয়ে তাদের নিকটে এলেন না। তারপর সকাল হলে রাসুলুল্লাহ (সা:) এলেন এবং তিনি বললেন, তোমাদের অপেক্ষা করার বিষয়টি আমি খেয়াল করছি। কিন্তু শুধু এ ভয়ে আমি তোমাদের সামনে আসা হতে বিরত থেকেছি যে, আমার আশঙ্কা হচ্ছিল, তোমাদের ওপর না জানি তারাবি নামাজ ফরজ করে দেওয়া হয়। (বুখারী)
তারাবি নামাজ বিশ রাকাত সুন্নাত। এটা রাসুল মোহাম্মদ(সা:), সাহাবী, তাবেঈন, তাবে-তাবেঈন এবং মুজতাহিদ ইমামগণের আমল হতে প্রমাণিত।
হযরত ইবনে আব্বাস (রা:) হতে বর্ণিত, রাসুল মোহাম্মদ (সা:) রোজার মাসে বিশ রাকাত তারাবি এবং বিতির নামাজ পড়তেন। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা)
সমস্ত সাহাবীদের আমলও বিশ রাকাত ছিল তারাবির নামাজ। রাসুল মোহাম্মদ (সা:) এর নাতি হযরত আলী ইবনে হাসান (রা:) হতে বর্ণিত, হযরত ওমর (রা:) এর নির্দেশে মানুষজনকে নিয়ে উবাই বিন কাব (রা:) বিশ রাকাত তারাবি নামাজ পড়েছেন। (আবু দাউদ)
এভাবে খলিফা ওমর, ওসমান, আলী (রা:) সহ সব সাহাবীদের মিলিত মতে বিশ রাকাত তারাবি নামাজ পড়া হয়েছে।
শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রহ:) বলেন, মক্কা ও মদীনা শরীফে সাহাবায়ে কেরামদের যুগ হতে আজ পর্যন্ত সব সময় বিশ রাকাত তারাবি নামাজ খতমে কোরআনসহ জামাতের সাথে পড়া হয়। তারাবি পূর্ণ কোরআন শরিফ তেলাওয়াত করা বা সোনা ও সুন্নত। রাসূল মোহাম্মদ মোহাম্মদ (সা:) বলেন, যে লোক কুরআন এর একটি হরফ পড়বে সে একটি নেকী অর্জন করবে এবং সেই একটি নেকীকে দশগুণ বৃদ্ধি করে তার আমল নামায় দেওয়া হবে। (তিরমিজি)
কুরআনুল কারীম তেলাওয়াত করা শুনলেও একই রকমই সওয়াব দেওয়া হবে। এজন্য তারাবি সালাত পরিপূর্ণ পড়ার সাথে সাথে মনোযোগ দিয়ে কোরআন শুনতে হবে।
বিশ রাকাত তারাবি না পড়ে ইমামকে রেখে মসজিদ থেকে বের হওয়া উচিত নয়। রাসুল (সা:) বলেন, যে লোক ইমামের সঙ্গে শেষ পর্যন্ত কিয়ামুল লাইল তথা তারাবির নামাজ আদায় করবে, তার জন্য পুরো রাত সিয়াম পালনের সওয়াব হতে থাকবে। (তিরমিজি)
করোনার সময় সবকিছু থমকে গেছে।এই করোনার সংক্রমণ থেকে বাঁচতে মসজিদে জামাতে নামাজ পড়া সহ অনেক কিছুতে নিষেধাজ্ঞ দেওয়া হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। তারাবির সালাত সর্বোচ্চ ১২ জন একসাথে পড়তে পারবে বলে নির্দেশনা দেয় ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে। যার কারণে মুসল্লিরা যে যার যার নিজ ঘরে থেকেএশা ও তারাবির নামাজ করেছেন। সবাই যে যার মত ব্যক্তিগতভাবে তেলাওয়াত, জিকির ও দোয়ার মাধ্যমে মহান আল্লাহ তালার রহমত পাওয়া ও বিপদ মুক্তির জন্য দোয়া করছেন।
রমজান মাসের বিশেষ ফজিলত পূর্ণ ইবাদাত তারাবির সালাতে কোনোভাবেই অবহেলা করা উচিত নয়। আসুন আমরা সবাই যথাযথ গুরুত্বের সাথে তারাবির সালাত আদায় করে আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং রহমত অর্জনের চেষ্টা করি। আল্লাহ আমাদেসকলকে তৌফিক দান করুন।
উপসংহার
আমাদের সকলের রমজান মাসের তারাবি নামাজের গুরুত্ব বুঝার পাশাপাশি রমজান মাসের সকল আমলের গুরুত্ব বোঝা উচিত, যা আমাদেরকে আখেরাতে নাজাত পেতে সাহায্য করে নামাজ হচ্ছে বেহেস্তের চাবি। বেশি বেশি রমজান মাসের নেক আমলে জান্নাত লাভের তৌফিক দান করুন। আমাদের উচিত সকল কাজের আগে নামাজের গুরুত্ব দেওয়া। ফজর নামাজে অলসতা করে এত বেশি সাওয়াব আর নেকী রয়েছে যা নষ্ট করবেন না এবং সেই সমস্ত মাধ্যম অবলম্বন ব্যবহার করার চেষ্টা করা উচিত যা আমাদেরকে আল্লাহর হুকুমে ফজর নামাজের জন্য জাগিয়ে দিবে। এবং নফল নামাজ পড়ার তৌফিক দান করুক । এরকম আরো প্রয়োজনীয় বিষয় জানতে আমার এই ওয়েবসাইট এর সাথে থাকুন । আল্লাহ হাফেজ