আসসালামু আলাইকুম কেমন আছেন সবাই, আলহামদুলিল্লাহ আমিও ভালো আছি । আল্লাহ আমাদেরকে কেমন সৃষ্টি করেছেন দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন তেমনি করে আবার দুনিয়া থেকে নিয়ে যাবেন । দুনিয়াতে আমরা কেউ চিরস্থায়ী না । আসছি একা যেতে হবে একা এবং মৃত্যুর অনিবার্য আর অথবা কাল । আল্লাহ বলেছেন দিনে অন্তত ১০০ বার মৃত্যুর কথা স্মরণ করো আর তা না পারলে অন্তত একবার হলেও মৃত্যুর কথা স্মরণ করো ।
মৃত্যুর লীলা
বন্ধুগণ, এ দুনিয়ার হাকীকত কতটুকু? দুনিয়াকে কেন্দ্র করিয়া মনে মনে মানুষ কতনা জল্পনা-কল্পনার জাল বুনিতে থাকে। ঐ যমীন, ঐ বাড়িটা খরিদ করিব, অমুক প্লানের একটা দালান বানাইব, এই কারখানা তৈরি করিব, আগামী ইলেকশনে প্রধান মন্ত্রীর পদের জন্য লড়িব, ইত্যাদি । হঠাৎ যেদিন আজরাইল (আঃ)
আসিয়া উপস্থিত হন, সেদিন আমাদের সকল জল্পনা-কল্পনার কী পরিণতি হয়?
কল্পনার কতনা মোহময় প্রোগ্রাম, রঙ্গীন সংসার, কতনা শক্তির দাপটকে মিসমার করিয়া দিল । আশা-আকাঙ্খার কতনা প্রাসাদকে ধুলিস্যাত করিয়া দিল ।
অর্থাৎ বহু গোরস্থানের এ মর্মবিদারী দৃশ্য আমি অবলোকন করিয়াছি যে, কোমল বদন, সুদর্শন চেহারার মত পরম সুন্দর-পরমাসুন্দরী তরুণ-তরুণী, যুবক-যুবতীদিগকে নিদারুণ অসহায় অবস্থায় গোরস্থানের মাটিতে দাফন করা হইতেছিল। তখন তাহাদের মুখমণ্ডল চন্দ্রের মত সমুজ্জ্বল দেখাইতেছিল। কাফনের কাপড়ও ছিল সুগন্ধময়। কিছুদিন পর পুরাতন হইয়া তাহাদের কবরসমূহ যখন ধসিয়া পড়িল, তো চাহিয়া দেখি, হায়, সেই কাফনবস্ত্রের একটি সুতাও সেখানে বিদ্যমায় নেই। এ করুণ দৃশ্য আমাকে হতবাক করিয়া দিল, আমার বেদনাক্লিষ্ট হৃদয়মনকে ভাবাইয়া তুলিল। বন্ধুগণ, যে দেহের শোভা- সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য দিবারাত আমরা ব্যস্ত, যাহার জন্য আমাদের হৃদয়মন সর্বদাই বড় মগ্ন ও মত্ত, এই ত হইবে সেই দেহখানার নির্মম পরিণতি। হায়, যেই রূপ-লাবণ্য ও সুন্দরের পাগল হইয়া মানুষ দ্বীন-ঈমান ও আখেরাত বরবাদ করে, এই বুঝি উহার চরম পরিণতি!
মাওলানা রূমী (রঃ) বলেন, হে মানুষ; যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা ক্ষণস্থায়ী রূপ- রঙের পূজা না বর্জন করিবে, যতক্ষণ পর্যন্ত তোমাদের অন্তরে সুদর্শন সুদর্শনাদের অবৈধ প্রেম-ভালবাসা বিরাজমান থাকিবে, কোন বালক বা নারীর সহিত হারাম সম্পর্কে লিপ্ত থাকিবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তোমরা আল্লাহকে পাইবে না এবং আল্লাহ্ সহিত প্রেমের সম্পর্ক হইতে বঞ্চিত থাকিবে। আল্লাহ্পাক বলেন ঃ
হে আদম সন্তান, তোমরা আমার সহিত প্রেমের বন্ধন পয়দা কর, আমার সহিত ভালবাসা গড়িয়া তোলার মর্মময় পথ অনুসন্ধান কর এবং সেই পথ ধরিয়া আগে বাড়। রূপ-মূর্তির পূজা ও অসাড় ছাল-বাকলের ভালবাসা পরিহার কর। রূপ-আকৃতি, মূর্তি প্রীতি ত্যাগিয়া বন্ধুগণ, চিত্ত মাঝে নিত্য দেখ অযুত ফুল কানন। আদমতনয়, মাওলাপ্রেমের নিবিড় বাঁধন গড়
মূর্তিপ্রীতি, বাকলপ্রীতি মাওলাপ্রেমে ছাড়। হে আদম সন্তান, তোমরা আমি মাওলার সহিত প্রগাঢ় ও নিবিড় প্রেমবন্ধনে আবদ্ধ হও, আমার সঙ্গে ভালবাসা গড়িয়া তোলার মর্মময় পথ অনুসন্ধন কর । রূপ ও আকৃতির মূর্তি পূজা এবং দুনিয়ার প্রতি অন্ধ অবৈধ ভালবাসা বর্জন কর। তবেই তুমি মাওলাপ্রেমের পথে বিছানো কাঁটা সরাইয়া দিলে। আর এই কাঁটা সরাইতে পারিলেই তুমি মাওলাকে পাইয়া গেলে। অতঃপর তিনি বলেন ঃ
অর্থাৎ বাহ্যিক চাকচিক্য, রূপ-লাবণ্য বর্জন করিলে, নাপাক সম্পর্ক হইতে বিরত থাকিলে আল্লাহপাক তাহাকে আপন প্রেমের নিবিড় সান্নিধ্য প্রদান করিবেন, হৃদয় কাননকে ফুলবাগানের মত নূরে নূরে পরিপূর্ণ করিয়া এক সুমধুর প্রেমকানন বানাইয়া দিবেন ।
দুনিয়ার মায়াজাল হইতে মুক্ত ও খোদাপ্রেমিক হওয়ার উপায় কি?
এখন প্রশ্ন হইল, এই রূপ-লাবণ্য ও ছাল-বাকলের মোহ হইতে মুক্তি লাভ হইবে কিরূপে? উহার উত্তরে মাওলানা জালালুদ্দীন রূমী (রঃ) বলেন, যতক্ষণ
পর্যন্ত আমি মহান খোদাপ্রেমিক হযরত শামসুদ্দীন তাবরেযী (রঃ)-এর ছোহবত ও সান্নিধ্য অবলম্বন না করিয়াছি, ততক্ষণ পর্যন্ত আমার শত এল্ম ও বিদ্যাবুদ্ধি থাকা সত্ত্বেও উহার উপর আমার যথার্থ আমল নসীব হয় নাই। আমলবিহীন এলম ও জ্ঞানের বোঝাই শুধু বহন করিতেছিলাম। যখন হযরত শামসুদ্দীন তাবরেযীর মোলাকাত ও তাঁহার ছোহবত নসীব হইল, তিনি আমার অন্তর ও আত্মাকে আল্লাহ্র প্রেম-মহব্বত যোগে গরম করিয়া দিলেন, প্রেম-উত্তাপে দগ্ধীভূত হৃদয় লাভের পরই এলমের উপর আমলের তওফীক হইতে লাগিল, মাওলার সন্তুষ্টি লাভের এক অবারিত পিপাসা, তদুদ্দেশ্যে বন্দেগী পালনের জিন্দেগী নসীব হইয়া গেল ।
শেষ কথা
আমাদের সকলের বোঝা উচিত মৃত্যু আমাদের অতি নিকটে ।মৃত্যু থেকে আমরা কেউই বাঁচতে পারব না তাই আমাদের সকলের উচিত নৃত্যকে স্মরণ করো ।আমরা কি পৃথিবীতে চিরস্থায়ী থাকতে পারবো না।আল্লাহ আমাদের সকলকে ইসলাম সম্পর্কে বুঝার তৌফিক দান করুক ।