কবর যিয়ারতের উদ্দেশ্য ও উপকারিতা

আসসালামু আলাইকুম কেমন আছেন সবাই?  আশা করি ভাল আছেন, আমিও আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহর রহমতে ভালো আছি। আজকে আমি আপনাদের সাথে শেয়ার কবর যিয়ারত নিয়ে কিছু কথা । কবর যিয়ারত  সম্পর্কে জানতে আমার আজকের আর্টিকেলটি পড়তে থাকুন।




মূলত কবর যিয়ারতের দ্বারা উদ্দেশ্য হল, যিয়ারতকারীর আত্মশুদ্ধি অর্থাৎ এর দ্বারা মৃত্যুর কথা ও এ জগতের অসারতা স্মরণ করে যিয়ারতকারীর হৃদয় পরকালমুখী হয় এবং দুনিয়ার মহব্বত কমে যায়। আর দুনিয়ার মহব্বতই হল সমস্ত গুনাহের মূল। নিম্নে উল্লেখিত হাদীস সমূহ থেকে আমার এ বক্তব্য স্পষ্ট হয়ে যাবে। ইনশা-আল্লাহ।


১নং হাদীসঃ


عَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ رض، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، قَالَ: «كُنْتُ نَهَيْتُكُمْ عَنْ زِيَارَةِ الْقُبُورِ ، فَزُوْرُوهَا، فَإِنَّهَا تُزَقِدُ فِي الدُّنْيَا، وَتُذَكِّرُ الْآخِرَةَ» ابن ماجه

> সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৯৭৫

* সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৯৭৪; মিশকাত, হাদীস নং ১৭৬৭


অর্থঃ আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রযিঃ) থেকে বর্ণিত, রসুল (সصَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّ ( বলেন, "আমি তোমাদেরকে কবর যিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম। এখন থেকে তোমরা যিয়ারত কর। কেননা উহা দুনিয়ার মোহ কমিয়ে দেয় এবং পরকালের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। "


২নং হাদীসঃ


مُحَمَّدُ بْنُ النُّعْمَانِ، يَرْفَعُ الحَدِيثَ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: مَنْ زَارَ قَبْرَ أَبَوَيْهِ أَوْ أَحَدِهِمَا فِي كُلِّ جُمْعَةٍ غُفِرَ لَهُ وَكُتِبَ بَرًا " رواه البيهقي في شعب الإيمان مرسلا (مشكوة) قال العراقي : مرسل صحيح الإسناد (فيض القدير) অর্থঃ মোহাম্মাদ ইবনে নোমান থেকে বর্ণিত, রসুল ) صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ ( বলেন, যে ব্যক্তি প্রতি জুমায় (অথবা প্রতি সপ্তাহে) তার পিতা-মাতা উভয়ের বা কোন একজনের কবর যিয়ারত করবে তার গুনাহ মাফ করা হবে এবং তাকে সু-সন্তান হিসেবে লেখা হবে।২


ঈছালে ছওয়াব বা মৃত ব্যক্তিকে ছওয়াব পৌঁছানো


প্রথমেই এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, যারা ঈমান নিয়ে মৃত্যুবরণ করে না সে যতই ভাল বংশ, নবী বা পীর অলির সন্তান হউক না কেন তাদের জন্য কোন কিছুই করার নেই। অর্থাৎ যা কিছুই তার ক্ষমার উদ্দেশ্যে করা হবে তাতে তার কোন লাভ হবে না। আর কারও ব্যাপারে যদি আমরা জানতে পারি যে সে কাফের, মুশরিক অথবা মুসলমানের সন্তান হওয়া সত্ত্বেও নাস্তিক ছিল তবে তার জন্য দোয়া করার অধিকারও আল্লাহপাক আমাদের কাউকে দান করেননি। যেমন, হযরত নূহ আলাইহিচ্ছছালাম কে তার নাস্তিক ছেলের জন্য এবং হযরত ইব্রাহীম আলাইহিচ্ছছালাম কে তার মুশরিক পিতার জন্য ক্ষমার আবেদনটুকু করতে নিষেধ করার ঘটনা পবিত্র কোরআনে উল্লেখ করা হয়েছে। সুতরাং যারা মৃত্যু পর্যন্ত ঈমানের উপর অটল থাকা সত্ত্বেও ফাঁকে ফাঁকে গুনাহে লিপ্ত হয়েছিল অথবা কোরআন ও হাদীসের উপর পূর্ণ আস্থা সত্ত্বেও আমলের ক্ষেত্রে উদাসীন ছিল কিন্তু নিজেকে অপরাধী মনে করত; শুধুমাত্র তাদের জন্যই ঈছালে ছওয়াব করা যাবে, দোয়া ও মাগফেরাত কামনা করা যাবে।

১ ইবনে মাজাহ, হাদীস নং ১৫৭১

২ শুয়াবুল ঈমান লিল বাইহাকী; মিশকাত ১/১৫৪, হাদীস নং ১৭৬৮


ঈছালে ছওয়াব বা ছওয়াব পৌঁছানোর তরিকা


অতিশয় দয়াবান সৃষ্টিকর্তা ও পালনকর্তা অসার জগতের এই পরীক্ষার সংসারে আমাদের হেদায়াত ও নাজাতের জন্য যেভাবে রেখেছেন অসংখ্য পন্থা ও উপকরণ; তেমনিভাবে গুনাহগার পাপী মুমিনের জন্য মৃত্যুর পরেও পাপ মোচনের জন্য রেখেছেন অনেক সুযোগ। অবশ্য সে সুযোগগুলো মৃতব্যক্তির হাতে নেই বরং তা জীবিতদের কাছে দাস্ত করা হয়েছে। আর সেই সুযোগগুলোকেই আমরা ঈছালে ছওয়াব বলে থাকি। এক কথায় কোন নেক আমল করার পর আমরা বলতে পারি, হে আল্লাহ! আমাদের এ নেক আমলের দ্বারা আমরা যে ছওয়াব বা প্রতিদানের অধিকারী হলাম মেহেরবাণী করে আপনি তা অমুক অমুক আত্মীয়কে কে পৌছিয়ে দিন। এভাবে নিয়ত করার দ্বারা অথবা বলার দ্বারা আল্লাহপাক উক্ত আমলের ছওয়াব নিয়তকৃত ব্যক্তির আমল নামায় পৌঁছিয়ে দিবেন এবং তাকে বলা হবে তোমার জন্য অমুক ব্যক্তি এ ছওয়াব পাঠিয়েছে বা দোয়া করেছে। মৃত ব্যক্তি তা দেখে যারপরনাই আনন্দিত হন।

কোন কোন ছওয়াব পাঠাবেন

পূর্বেই বলে এসেছি, যে কোন নেক কাজের ছওয়াব পাঠানো যাবে। যেমন:

(১) নফল নামাজের ছওয়াব।

(২) হানাফী মাযহাব মতে, সব ধরনের ফরজ ইবাদতের ছওয়াবও বখশিশ করা যাবে।

(৩) নফল হজ্ব অথবা ওমরার ছওয়াব।

(৪) দ্বীনের দাওয়াত ও জেহাদের ছওয়াব।

(৫) তাসবীহ, তাহলীল, যথা- সুবহানাল্লাহ্, আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ইত্যাদি। এগুলোর জন্য নির্ধারিত কোন সংখ্যারও প্রয়োজন নেই।

যত বার সম্ভব পড়ুন এবং উল্লেখিত নিয়মে পাঠিয়ে দিন।

(৬) কোরআন জানা থাকলে যতটুকু সম্ভব তেলাওয়াত করুন। নতুবা যতটুকু মুখস্থ

আছে তা বার বার পড়ুন এবং নিয়ত করে ছওয়াব পাঠাতে থাকুন।

৭) যে কোন মানুষের উপকার করা।

( (৮) সব ধরনের মেহমানদের আপ্যায়ন করা অর্থাৎ মেহমান যিনিই হোক না কেন।

(৯) মানুষকে ভাল পরামর্শ দেয়া।

(১০) ইলম শিক্ষা দেয়া অর্থাৎ যতুটুকুই আপনার দ্বীনি ইলম জানা আছে, তা অন্যকে শিক্ষা দিন। (যদি আপনার জানাটুকু নির্ভুল হয়।)

(১১) আলেমদের তাজীম করা, ছোটদের স্নেহ করা, বড়দের সম্মান করা এসব কাজে কোন পয়সা কড়িরও প্রয়োজন হয় না। অথচ এর ছওয়াব অসংখ্য ও অগণিত।

(১২) টাকা পয়সা থাকলে তা ভাল কাজে ব্যয় করা

(১৩) দান ছদকা করা। অবশ্য এসব ক্ষেত্রে লোক দেখানো অথবা সুনাম অর্জন ইত্যাদি থেকে অবশ্যই আপনার আমলটুকু পবিত্র থাকতে হবে। নতুবা

ছওয়াবের কোন আশা নেই। উল্লেখ্য যে, ঈসালে সওয়াবের জন্য নেক কাজের কোন অন্ত নেই। নমুনা স্বরূপ সামান্য কিছু পেশ করলাম।

বেশী উত্তম হল

মৃত পিতা-মাতা ও আপনজনদের কথা যখনই মনে পড়ে তখন এভাবে বলুন, হে আল্লাহ। অমুক কে ক্ষমা করে দিন; কবরে হাশরে সর্বত্র সাহায্য করুন, ইত্যাদি। আপনি নিশ্চিত থাকুন এর কোনটাই বেকার যাবেনা। আপনার নাম ধরে তার কাছে পৌঁছানো হবে এবং সে আনন্দিত হবে। আরো উত্তম হল প্রত্যেক নামাজের শেষ বৈঠকে যে দোয়াটি পাঠ করে থাকেন অর্থাৎ আল্লাহুম্মা ইন্নি জ্বলামতু নাফসী...... এর পূর্বে অথবা পরে নিম্ন লিখিত দোয়াটি পাঠ করুন-

اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي وَلِوَالِدَيَّ وَلِلْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ

উচ্চারনঃ আল্লাহুম্মাগফিরলী- ওয়ালিওয়া-লিদাইয়্যা ওয়ালিল মু'মিনী-না ওয়াল মু'মিনাত অর্থঃ হে আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করুন এবং আমার পিতা-মাতা ও সকল মুমিন নারী পুরুষকেও ক্ষমা করুন।'

উল্লেখ্য যে, দোয়া মাছুরা কেবলমাত্র একটিই নয়; যা অনেকেই সর্বদা নামাজে পাঠ করে থাকেন বরং কোরআন ও হাদীসে অনেক দোয়া মাছুরা রয়েছে, যা যে কোন নামাজে শেষ বৈঠকে পড়া যেতে পারে। আমার লেখা 'সফল মুনাজাত' নামক কিতাবে কিছুটা বিস্তারিত লেখা হয়েছে। দেখে নিলে আশা করি উপকৃত হবেন।


Previous Post Next Post

نموذج الاتصال