পাপের সাগর পেরিয়ে

আপনারা আমার অতীত জানেন না। আপনারা জানেন না যে, আমি কোথা হতে এসেছি। জানেন না আমি কী কী করেছি। এটা সবসময়, সবার জন্যই। এটা সবসময়, সবার জন্যই।



সহিহুল বুখারিতে রয়েছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একজনের ঘটনা বর্ণনা করেন, যে কিনা ৯৯ জনকে হত্যা করেছে।


আমার ভাইয়েরা! আপনারা যারা এই রুমে বসে আছেন। কেউ কি আছেন তার মতো? এমনকি সবাই মিলেও যদি ধরি, আমার মনে হয় না এই লোকের চার ভাগের এক ভাগ হত্যা করা হয়েছে। একেবারে সহিহুল বুখারির বর্ণনা। রিয়াদুস সালিহিন খুলুন। দ্বিতীয় অধ্যায়ের তাওবা অংশ দেখুন।


৯৯ জনকে হত্যা করার পর তার অন্তরে কিছু একটা নাড়া দেয়। এবং সে তাওবা করার সিদ্ধান্ত নেয়। তাই সে লোকজনকে জিজ্ঞেস করে, আমি কোথায় যেতে পারি? তাওবা করার জন্য কী করতে পারি? লোকজন তাকে পরামর্শ দিলো, ওই আবিদ লোকটির কাছে যাও। সে রাত-দিন আল্লাহর ইবাদত করে। যদি কিছু জানতে চাও, তো তাকেই জিজ্ঞেস করো। লোকটি তার কাছে গেল। বলল, আমি ৯৯টা খুন করেছি। আল্লাহ কি আমাকে ক্ষমা করবেন? আবিদ লোকটি তার মতো জবাব দিলো।


ভাইয়েরা! এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় লক্ষণীয়। সেটা হলো-শুধু বাহ্যিক ধার্মিকতা দেখেই কারও কাছে ইলম শিখতে চাওয়ার ব্যাপারে সাবধানতা অবলম্বন জরুরি। আপনি বলতে পারেন, ভাই লোকটি তো সারাদিন মসজিদে পড়ে থাকে। মসজিদে পড়ে থাকে বলে তার সম্পর্কে আরও অনেক ইতিবাচক ধারণা করে নিলাম। এরকমটা আমরা সবাই করে থাকি।


বলি ভাই, অমুকের দাড়ি ইয়া বড়ো, সারাদিন মসজিদে পড়ে থাকে, সে অনেক বড়ো আবিদ। আসলে যে সারাদিন মসজিদে পড়ে থাকে সে সমাজের অনেক কিছুই দেখে না। সে যখন দেখল একজন ৯৯টা খুনকারী ব্যক্তি তার সামনে দাঁড়িয়ে, সে অবাক হলো! সে তো জীবনে একটা হত্যার বাস্তবতাই দেখেনি, ৯৯টা দূরে থাক।


তাই সে হত্যাকারীকে বলে দিলো-আল্লাহ তোমাকে কখনোই ক্ষমা করবেন না। তখন হত্যাকারী চিন্তা করল, আল্লাহ যেহেতু ক্ষমা করবেনই না, তাহলে তোমাকেও হত্যা করে ফেলি। লোকটি সত্যি সত্যি সেই আবিদকে হত্যা করে ফেলল। ভাইয়েরা, দেখুন লোকটি তার ফাতওয়া পছন্দ করেনি বিধায় তাকে হত্যা করে ফেলল। তাহলে ভাবুন, লোকটি কতটা নিষ্ঠুর ছিল।


সে একজন আবিদকে হত্যা করে ফেলে। এমন না যে আবিদ লোকটি তাকে কোনো খারাপ কথা বলেছে। চোখ রাঙিয়েছে। রাস্তায় চলতে বাধা দিয়েছে কিংবা অপমানজনক কিছু করেছে। কিন্তু নিষ্ঠুর হত্যাকারী তাকে হত্যা করে এবং একশোটা খুনের মাইলফলক পূরণ করে। একেবারে বিশুদ্ধ বর্ণনা, সহিহুল বুখারি থেকে।


রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, সে সতি সত্যি আল্লাহর দিকে ফিরে আসতে চাচ্ছিল। তখন লোকেরা তাকে বলল, তুমি আর এখানে থেকো না, নচেৎ আমাদের সবাইকে মেরে ফেলবে। তুমি বরং দূরের ওই অঞ্চলে চলে যাও, সেখানে একজন আলিম আছে, তুমি তার কাছে চলে যাও। তাকে গিয়ে তোমার প্রশ্নটি করো।


গল্পটি অনেক বড়ো, আমি সংক্ষেপে বলছি। খুনি লোকটা সেই আলেমের কাছে যায়। তাকে গিয়ে জিজ্ঞেস করে, আমি ১০০ জনকে হত্যা করেছি, আল্লাহ কি আমাকে ক্ষমা করবেন? উত্তরে আলিম বললেন, আল্লাহ এবং তোমার মাঝে কে দাঁড়িয়ে আছে? কে? কেউই তোমাকে আল্লাহর ক্ষমাপ্রাপ্তি থেকে বিরত রাখতে পারে না।


দুজন লোকের পার্থক্য দেখুন। একজন মসজিদে পড়ে থাকা আবিদ আর জ্ঞান অন্বেষণ করা আলিমের মাঝে পার্থক্য দেখুন।


পরে আলিম তাকে পরামর্শ দিলেন, তোমাকে এই এলাকা ছেড়ে চলে যেতে হবে। এই পরিবেশ ছেড়ে দূরে কোথাও চলে যাবে। কারণ, এটা খুব খারাপ পরিবেশ। এখানকার মানুষেরা তোমাকে ভালো হতে সাহায্য করবে না। তুমি অমুক এলাকায় চলে যাও, সেখানে অনেক ভালো লোক আছে। সেখানকার লোকেরা তোমাকে আল্লাহর ইবাদত করতে সাহায্য করবে এবং জীবনে পরিবর্তন আনতে ভূমিকা রাখবে। লোকটি আন্তরিকতার সাথে তার কথা গ্রহণ করল। প্রয়োজনীয় উপকরণ নিয়ে ওই শহরের দিকে যাত্রা করল।

পথিমধ্যে লোকটি মৃত্যুবরণ করল। আজাবের ফেরেশতারা তার জন্য এল, আবার মাগফিরাতের ফেরেশতারাও তার কাছে এল। দুই দল ফেরেশতা এবার ঝগড়া শুরু 


করে দিলো। মাগফিরাতের ফেরেশতারা বলল, সে তাওবা করেছে, মাগফিরাত পেয়ে গেছে, সুতরাং আমরা তাকে নিয়ে যাব। আজাবের ফেরেশতারা বলল, না না না! সে একশোটা খুন করেছে। তার তাওবা পুরা হয়নি, সে পথিমধ্যে মারা গেছে। তাই আল্লাহ তৃতীয় আরেক পক্ষকে পাঠালেন মীমাংসা করার জন্য। তৃতীয় ফেরেশতা বলল, দূরত্ব মাপা হোক।


যদি সে পাপের শহরের কাছাকাছি থাকে, তবে আজাবের ফেরেশতারা তাকে নিয়ে যাবে। আর যদি সে ভালো শহরের কাছাকাছি থাকে, তবে মাগফিরাতের ফেরেশতারা তাকে নিয়ে যাবে। তারা মাপজোখ শুরু করল। এবং দুর্ভাগ্যজনকভাবে লোকটি পাপের শহরের কাছাকাছি ছিল।" সহিহুল বুখারির বর্ণনা। আল্লাহ জমিনকে আদেশ দিলেন দূরত্ব কমিয়ে ফেলার। যাতে লোকটির দেহ ভালো শহরের এক হাত ভেতরে থাকে...



Previous Post Next Post

نموذج الاتصال