দীনের জন্য সমালোচনা

আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ। কেমন আছেন সবাই?  আশা করি ভাল আছেন, আমিও আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহর রহমতে ভালো আছি। আজকে আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করব সমালোচনা নিয়ে কিছু কথা । সমালোচনা সম্পর্কে জানতে আমার আজকের আর্টিকেলটি পড়তে থাকুন।



প্রিয় ভাই ও বোনেরা, আজকে কথা বলব মিলাদ নিয়ে। মিলাদ পালন করা যায় কি যায় না?

আসলে ভাইয়েরা, এ বিষয়টির কোনো চূড়ান্ত সীমারেখা আমি টানব না। আমাদের সবাইকে মনে রাখা দরকার, আমরা যে বিষয় নিয়েই আলোচনা করি না কেন, তা যেন অন্যের প্রতি অশ্রদ্ধা করে না হয়।


ব্যাপারটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, এমনকি আমার জন্যও। আমি মনে করি, আমাদের সবাইকে এটা উপলব্ধি করা উচিত এবং এটা আমি আন্তরিকভাবেই বিশ্বাস করি যে, যারা মিলাদ পালন করে, তারা তা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ভালোবাসার দরুনই করে থাকে। পক্ষান্তরে আমি এটাও বিশ্বাস করি যে, যারা মিলাদ পালন করে না, তারাও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ভালোবাসার দরুনই মিলাদ পালন থেকে বিরত থাকেন।


প্রিয় ভাই ও বোনেরা, যখন এ ধরনের আলোচনা শুরু হয়, তখন আমাদের উচিত একে অপরের প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা। আর এই শ্রদ্ধা ও ভালোবাসাই সবকিছুর মূল।

আমি খুবই ব্যথিত হই, যখন দেখি উম্মাহ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নাম নিতে গিয়েও একে অপরকে অপমানিত করে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নাম নিতে গিয়ে একে অপরকে এত অশালীনভাবে গালিগালাজ এবং কথা কাটাকাটি শুরু করে, যা নবি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখনোই অনুমোদন করতেন না।


আপনারা জানেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন ভালোবাসা ও ঐক্যের উজ্জ্বল এক নিদর্শন। ভালোবাসা দিয়ে তিনি সবাইকে কাছে টেনে নিতেন। মাঝেমাঝে আমি নিজেকে প্রশ্ন করি, আমি যে পথে আছি, যেভাবে আছি, তা কি নবি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পছন্দ করতেন?

আমরা আসলে এমন একটা সময়ে আছি, যখন উম্মাহর প্রত্যেকেরই উচিত একে অপরকে অত্যন্ত শ্রদ্ধা করা, একে অপরকে ভালবাসা এবং একে অপরকে কাছে টেনে নেওয়া। আমাদের উচিত নয় একে অপরের বিরুদ্ধে যুক্তিতর্কে নামা, বাহাস করা কিংবা একে অপরের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়ানো। 





এ জাতীয় কাজে আমাদের সময় নষ্ট করা উচিত নয়। আমরা এমন একটি সময়ে বসবাস করছি, যে সময়ে আমাদের প্রত্যেকের উচিত একে অপরের সাথে হৃদ্যতার বন্ধনে আবদ্ধ থাকা এবং একে অপরকে ভালোবাসা। শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান করা। হ্যাঁ, আপনার-আমার মধ্যে বিতর্ক থাকতে পারে। আমাদের একে অপরের সাথে অনেক বিষয়ে মতপার্থক্য থাকতে পারে। আমাদের এ সমালোচনা হবে শুধু দীনের জন্য। কাউকে ছোটো করার জন্য নয়। কিংবা কাউকে তুচ্ছ করার জন্যও নয়। ১, ২, ৩ এরকম একটা তালিকা করে দেখেন, আমাদের মধ্যে এরকম হাতে-গোনা কয়েকটি বিষয়ে দ্বিমত থাকতে পারে। কিন্তু আবার এটাও কি সত্য নয় যে, আমরা অসংখ্য বিষয়ে একমত?

আমরা আল্লাহর একত্ববাদে একমত, আমরা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানব মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শেষ নবি হওয়ার ব্যাপারে একমত। আমাদের নবির সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অসংখ্য বিষয়ে আমরা একমত। তো সেই বিষয়গুলো আমাদের একে অপরের মধ্যে ভালোবাসা সৃষ্টি করতে, ঐক্য তৈরিতে কাজে লাগান। অল্প কিছু দ্বিমতকে কল্পনা করে বিভক্তি সৃষ্টি করবেন না।


তবে হ্যাঁ, যদি কেউ পাণ্ডিত্যপূর্ণ বিতর্ক করতে চায়, সত্যি সত্যি যদি কোনো আলিম দেখেন যে, সেখানে কিছু বিষয় ইসলামি সীমারেখার বাইরে চলে যাচ্ছে; তবে সেটা সুন্দর আয়োজনের মাধ্যমে করা যায়। কিন্তু ইন্টারনেটে একে অপরের বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়া, একে অপরের প্রতি অশ্রদ্ধা প্রদর্শন করা, একে অপরকে নিয়ে ঠাট্টা-তামাশা করা, একে অপরের ইমান নিয়েই সন্দেহ পোষণ করা, অপরে এটা করে কেন, ওটা করে না কেন ইত্যাদি, এসব বিবাদে জড়ানো নিশ্চিতভাবেই অনৈসলামিক। এগুলো সুন্নাহবিরোধী কাজ।


তাই প্রিয় ভাই ও বোনেরা, আমি আন্তরিকভাবে চাই, আমরা একে অপরকে শ্রদ্ধা করতে শিখব। একে অপরকে ভালোবাসতে শিখব। অন্যরা কী করল এটা না ভেবে একে অন্যের কল্যাণকামী হব। একে অন্যের প্রতি ইতিবাচক মনোভাবাপন্ন হব। আমি আল্লাহর কাছে দুআ করি, তিনি যেন আমাদের অন্তর খুলে দেন। হৃদয়ে হৃদ্যতা ঢেলে দেন। কারণ, এখন এমন একটা সময়, যখন সত্যিই এই হৃদ্যতা খুব খুব প্রয়োজন। আবার কথা হবে। সে পর্যন্ত আল্লাহ আপনাদের শান্তি ও কল্যাণের মধ্যে রাখুন।


Previous Post Next Post

نموذج الاتصال