আল্লাহ ক্যানসার দিয়ে আমাকে ধন্য করেছেন

আসসালামু আলাইকুম কেমন আছেন সবাই?  আশা করি ভাল আছেন, আমিও আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহর রহমতে ভালো আছি। আজকে আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করব ক্যানসার নিয়ে কিছু কথা । ক্যানসার সম্পর্কে জানতে আমার আজকের আর্টিকেলটি পড়তে থাকুন।



আমার এক বন্ধু। নাম 'আলি বানাত। তার সাথে সম্প্রতি সাক্ষাৎ করি। যুবক বন্ধুটি অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে জন্মগ্রহণ করে। সিডনিতেই বেড়ে ওঠে। বন্ধুটি আলহামদুলিল্লাহ অনেক সচ্ছল পরিবারের সন্তান। স্বাচ্ছন্দ্যেই জীবন কেটে যাচ্ছিল তার। কিন্তু সম্প্রতি একটি ঘটনা তার জীবন পাল্টে দেয়। সেই আলি বানাতের গল্পই বলব আজ।

আমি (হোবলস): এখানে তুমি কেমন আছ? সবকিছু কেমন যাচ্ছে?

আলি বানাত: জীবনের এই মুহূর্তে আমি আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহর পক্ষ হতে একটি উপহার পেয়েছি। উপহারটি হলো আমার সারা শরীরে ক্যানসার। সেখান থেকেই আমি আমার নিজেকে বদলানোর সিদ্ধান্ত নিই। মানুষের সেবায় কাজ করার সিদ্ধান্ত নিই।

হোবলস: কেন তুমি এ ক্যানসারকে গিফট বলছ?

আলি বানাত : আলহামদুলিল্লাহ, এটা আমার জন্য উপহার। কারণ, আল্লাহ আমাকে এ উসিলায় নিজেকে বদলানোর একটি সুযোগ দিয়েছেন।


হোবলস: কোন বিবেচনায় ক্যানসার তোমার চোখ খুলে দিলো?

আলি বানাত। জীবনের সবকিছুতেই, এমনকি ক্ষুদ্র একটি বিষয় নিঃশ্বাস গ্রহণের (দৃষ্টিভঙ্গির) ক্ষেত্রেও। হোবলস। কতদিন হলো ক্যানসার হয়েছে? আলি বানাত। চার মাস হলো।

হোবলস: আলির চার মাত্রার ক্যানসার ধরা পড়েছে। ডাক্তাররা বলেছে, সে আর সাত মাস বড়োজোর বাঁচতে পারে। এ খবর পাওয়া মাত্রই সে তার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বিক্রি করে দেয়। তার বিলাসবহুল জীবন নিয়ে ভাবতে শুরু করে। যে জীবনে সে অভ্যস্ত ছিল সবকিছুই কেমন যেন বদলে গেল। এরপর আবারও আলিকে প্রশ্ন। করলাম। আলি, ক্যানসার হবার খবর শুনে তোমার অনুভূতি কেমন হয়েছিল?

আলি বানাত: আমি আমার গাড়িতে চড়া ছেড়ে দিলাম। দামি দামি ঘড়ি হাতে দেওয়া ছেড়ে দিলাম। এমনকি বিদেশ থেকে কেনা দামি কাপড়চোপড় পরা বাদ দিয়ে দিলাম। সেগুলো আশেপাশের মানুষদের দিয়ে দিলাম। এই পার্থিব জীবনোপকরণ পরিহার করতে লাগলাম।


হোবলস: তুমি এরপর দুনিয়া ত্যাগ করার মিশন শুরু করলে?

আলি বানাত: হুম (মিষ্টি হাসি)।

হোবলস: আলি বানাত আমাদের তার ঘরে গিয়ে না গেলে আসলে আমরা বুঝতে পারতাম না সে কতটা বিলাসবহুল জীবনযাপন করত। বুঝতে পারতাম না কতটা ত্যাগ সে করেছে। এটা কী আলি? (শোকেসে একটি জিনিস দেখিয়ে)


আলি বানাত: এটি একটি ব্রেসলেট। যার দাম ষাট হাজার ডলার (বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৫০ লাখেরও বেশি)।

হোবলস: এই সব বক্সে কী আছে? (ছোটো ছোটো অনেকগুলো বক্স দেখিয়ে)

আলি বানাত: এগুলো আমার জুতা। লুইস ভিটন ব্র্যান্ডের।

হোবলস: এটার দাম কত?


আলি বানাত : এটার দাম সম্ভবত ১৩শত ডলার (বাংলাদেশি টাকায় প্রায় এক লাখ ত্রিশ হাজার টাকা)।

হোবলস: (একজোড়া চপ্পল দেখিয়ে) এটার দাম কত আলি?

আলি বানাত: 700 ডলারের মতো (বাংলাদেশি টাকায় প্রায় 70 হাজার টাকা)।

হোবলস। একজোড়া স্যান্ডেলের দাম?

আলি বানাত: জি. একজোড়া স্যান্ডেলের দাম।।


হোবলস: এই চশমাটা কেমন আলি?

জালি বানাত। আমি বিভিন্ন স্টাইলের চশমা সংগ্রহ করতে পছন্দ করতাম। আফ্রিকার এক দম্পতিকে এরকম কিছু চশমা দিয়ে নিই।

হোবলস: মানে তুমি বলছ আফ্রিকার ছেলেমেয়েদের তুমি লুইস ভিটনের জিনিসপত্র পরিয়ে দিয়েছ?

আলি বানাত: হুম... (মিষ্টি হাসি)।

হোবলস: এগুলো কি ক্যাপ?

আলি বানাত: জি, আপনি লাল ক্যাপটি পড়ে দেখুন। এই ব্র্যান্ডের ক্যাপ সারা পৃথিবীতে খুব অল্পই আছে।

ছোবলস: আলি বানাতের দুনিয়ার প্রতি আকর্ষণ একবারেই কমে গেছে হঠাৎ করে। তার অন্তরে পার্থিব জিনিসপত্রের প্রতি আর কোনো মায়া নেই। তারপরও আলিকে জিজ্ঞেস করি আলি, এই দুনিয়াবি জিনিসপত্রগুলো দেখে এখন তোমার কেমন লাগে?

আলি বানাত: (হাঁটতে হাঁটতে নিজের দামি গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আলি বলেন) এ জাতীয় গাড়ি দাপিয়ে বেড়াতে এখন আর মন টানে না। এই জিনিসগুলো এখন আর আমার প্রয়োজন নেই। ( স্পাইডার ব্র্যান্ডের গাড়িটি ছিল ফেরারি ; যার দাম 6 লাখ ডলার বা প্রায় 6 কোটি টাকা), যখন কেউ জানে যে সে (দুরারোগ্য) রোগে আক্রান্ত অথবা যদি জানে যে, সে আর বেশি দিন বাঁচবে না, তখন ওয়াল্লাহি কেউ চায় না এসব নিয়ে পড়ে থাকতে। আর এমনটাই হওয়া উচিত প্রতিদিনের জীবন।




এই রকম বিলাসবহুল গাড়িতে যে-কেউ চড়তে চাইবে। যার টাকা আছে কিনতে চাইবে। যার সামর্থ্য আছে ড্রাইভ করতে চাইবে। কিন্তু এসব মানুষেরা ভুল পথে আছে। আপনি এটা বুঝতে পারবেন অসুস্থ হবার মাধ্যমে। অসুস্থ হলে বুঝতে পারবেন এসব জিনিসের কোনো মূল্য নেই। এগুলো আপনার কোনো উপকারে আসবে না।

হোবলস: এগুলোর ব্যাপারে এখন কী ভাবছ?

আলি বানাত: আমার জন্য এই দামি গাড়ির চাইতে একজন আফ্রিকান মানুষের পায়ে একজোড়া জুতা বেশি প্রয়োজন। একজোড়া জুতা পেয়ে আফ্রিকান কালো


মানুষের মুখে সুন্দর হাসি এই গাড়িব চেয়ে বেশি মূল্যবান।

আোবলস। আলি এভাবেই তার শেষাজীবন ও জীবনের সম্পদ আফ্রিকান দরিদ্র মানুষের কল্যাণে ব্যয় করার সিদ্ধান্ত নেয়। আফ্রিকায় এক আবেগময় সফর শেষে সেখানে একটি দাতব্য প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। যার নাম "মুসলিমস অ্যারাউন্ড দ্যা ওয়ার্ল্ড প্রজেক্ট'। সংগঠনটি কোনো মসজিদ নির্মাণে সময় ব্যয় করে না। তার নামে কোনো বিদ্যালয়ও সেখানে গড়ে তোলেনি। বরং তিনি একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। যার কাজ হচ্ছে অসহায়দের গৃহ নির্মাণ, নিরাপদ পানি এবং অন্ন- বস্তু সরবরাহ করা।


আদি বানাত। যখন আমি এক ভাইয়ের কবর জিয়ারতে যাই, তখন আমি এটা বুঝতে পারি। ওই ভাইয়ের ক্যানসার হয়েছিল। আমি মনে মনে ভাবতে লাগলাম, আমারও তো এরকম হবে। ভাইটি মারা যাবার পর তার সাথে তো কেউ থাকে না। তাকে একা রেখে চলে আসে। কোনো বাবা না, কোনো মা না, কোনো ভাই না, কোনো বোন না...কেউ সঙ্গে যায় না। এমনকি আপনার টাকা-পয়সাও না। সঙ্গে যায় শুধু আমল এবং ভালো কাজ। সুতরাং ভালো কাজই করে যেতে হবে। আর এই ভালো কাজই, মানুষের সেবাই আপনার সাথে গিয়ে আপনাকে সাহায্য করবে। আপনার চূড়ান্ত গন্তব্যে পৌঁছতে সাহায্য করবে। আলি অধিকাংশ সময় নিজেকে পরকালের জন্য প্রস্তুতিতে কাটান। তার রবের সাথে চূড়ান্ত সাক্ষাতের প্রতীক্ষায় থাকেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

مَنْ أَحَبَّ لِقَاءَ اللهِ، أَحَبَّ اللهُ لِقَاءَهُ، وَمَنْ كَرِهَ لِقَاءَ اللهِ، كرة الله لقاءه

" আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ কামনা করে যে ব্যক্তি আল্লাহও তার সাথে সাক্ষাৎ করতে পছন্দ করেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করতে অপছন্দ করে আল্লাহও তার সাথে সাক্ষাৎ করতে অপছন্দ করেন।"*

হোবলস: তুমি কি আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ কামনা করো?


আলি বানাত। এই ক্যানসারের কারণে একভাই পরামর্শ দিয়েছিলেন একটি (মাদক জাতীয়) বিশেষ ঔষধ সেবনের। যাতে ব্যথা-বেদনা কিছুটা কমে। সুবহানাল্লাহ (সেই ওষুধ প্রায় না নিয়েও) আমি অনেক ভালো আছি। নিজেকে আমার এখন এক অন্য জগতের বাসিন্দা মনে হয়। আগে ছিলাম অজ্ঞতার আঁধারে। দিনগুলোর কথা মনে পড়লে কষ্ট লাগে। সুবহানাল্লাহ। একি

কিছু দেখছি, যা আগে কখনো দেখিনি। আমার পরিবার সবসময়ই আমাকে ঘিরে থাকে। তারা দেখছে, আমি ঘুমের ঘোরে বলে উঠি- “হে আল্লাহ! তোমার কাছে  আমাকে নিয়ে নাও।” আমি স্বপ্নে যা দেখতাম তা খুবই চমৎকার দৃশ্য। আমি শুধু সেই চমৎকার সুন্দর স্থানে যেতে চাই। প্রতিদিনই এরপর থেকে ঘুম থেকে জেগে উঠি আর আমার মন খারাপ হয়ে যায়... এই দেখে যে, আল্লাহ আমাকে এখনো (সেই সুন্দর স্থানে) নিয়ে যাননি।

হোবলস: আমি আল্লাহর কাছে দুআ করি, তিনি যেন তোমাকে কবুল করেন এবং শিফা দান করেন। তোমাকে আমাদের মাঝে আরও দীর্ঘ দিন বাঁচিয়ে রাখেন। আল্লাহ তোমাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন এবং জান্নাতুল ফেরদাওসে অধিষ্ঠিত করুন।

Previous Post Next Post

نموذج الاتصال